কাজী এনামকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য করায় ক্ষোভ

বিসিবির সাবেক পরিচালক কাজী এনাম আহমেদকে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য করায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে জেলার ক্রীড়া সংগঠকরা। অ্যাডহক কমিটি গঠনের আট মাস পর কমিটি থেকে ক্রীড়া সংগঠক শ্রীনিবাস হালদারের স্থলে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কাজী এনাম আহমেদ যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগনেতা কাজী নাবিল আহমেদের ভাই।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সব বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটির করার নির্দেশনা দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। সে অনুযায়ী গত ২২ জানুয়ারি যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাত সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটিতে পদাধিকারবলে আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক, ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে সদস্য মোহাম্মদ শফিকুজ্জামান, সাবেক ফুটবল ও হকি খেলোয়াড় হিসেবে এ জেড এম সালেক, কোচ হিসেবে শ্রীনিবাস হালদার, ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সাবিউল আলম শিমুল, ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মাসুদ রানা বাবু ও পদাধিকার বলে সদস্য সচিব করা হয় জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তাকে।
এই কমিটি গঠনের আট মাস পর গত ১ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন ও মুহাম্মদ বুরহান উদ্দীনকে অ্যাডহক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মাধ্যমে অ্যাডহক কমিটির সদস্য সংখ্যা সাত থেকে বেড়ে ৯ জনে দাঁড়ায়।
সবশেষ ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আরেকটি চিঠিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য শ্রীনিবাস হালদারের নাম পরিবর্তন করে সেখানে কাজী এনাম আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গতকাল রোববার রাতে এ খবর যশোর পৌঁছালে জেলা ক্রীড়া সংগঠকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা কোনোভাবেই ক্রীড়া পরিষদের এ সিদ্ধান্ত মানবেন না বলে জানিয়েছেন দিয়েছেন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক এম এ আকসাদ সিদ্দিকী শৈবাল বলেন, ‘কাজী এনাম আহমেদ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তার বড় ভাই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের ক্ষমতা বলে বিসিবির যশোরের কাউন্সিলরের পদ দখল করে ছিলেন। যশোরের ক্রীড়াঙ্গন তাদের দুই ভাইয়ের কাছে জিম্মি ছিল। এখন আবার সেই এনাম আহমেদকে জেলার ক্রীড়াঙ্গনে ফিরিয়ে আনায় আমরা মর্মাহত।’
আকসাদ সিদ্দিকী শৈবাল আরও বলেন, ‘আসন্ন ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনকে সামনে রেখেই এনামকে কৌশলে অ্যাডহক কমিটিতে ঢোকানো হয়েছে। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ রয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে কাউন্সিলর হতে হলে তাকে অ্যাডহক কমিটিতে থাকতে হবে। সে কারণেই এভাবে রদবদল করে কাজী এনামকে যশোরের ক্রীড়াঙ্গনে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক কোষাধ্যক্ষ সোহেল মাসুদ হাসান টিটো বলেন, ‘কাকে খুশি করতে ফ্যাসিস্টের ভাইকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো, সেটা আমরা জানতে চাই। তাকে এই কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে, না হলে আমরা তাকে বাদ দেওয়াতে বাধ্য করব।’
যশোর জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু বলেন, ‘এটা ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসনের অংশ। যাদের হাতে যশোরের ক্রীড়াঙ্গন ধ্বংস হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।’
জেলা প্রশাসক জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘কীভাবে কোন মাধ্যমে কাজী এনামকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমাদের নির্বাহী কমিটির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এ সংক্রান্ত একটি পত্র দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই বিষয়টি জানতে পেরেছি।’