নওগাঁ জেলায় এবার ৮০১ মণ্ডপে হবে দুর্গাপূজা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর (রোববার) ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের দুর্গোৎসব। তাই দেবী দুর্গাকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
মহালয়ার মধ্য দিয়ে গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) গজে (হাতি) চড়ে দেবীদুর্গা আসেন মর্ত্যলোকে। মহালয়ার মাধ্যমে দেবীপক্ষের সূচনা ও ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে মূলত পূজার নির্ঘণ্ট শুরু হয়। এজন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা। আর শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপনের আশায় আছেন সারা দেশের মতো নওগাঁ জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এবার এ জেলায় ৮০১টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হতে চলছে। এরমধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৬৬টি ও পৌরসভায় ৫৯টি, মহাদেবপুর উপজেলায় ১৫৩টি, মান্দায় ১১৯টি, বদলগাছীতে ১০৩টি, পত্নীতলায় ৭৮টি, নিয়ামতপুরে ৫৮টি, আত্রাইয়ে ৫১টি, রানীনগরে ৪৭টি, ধামইরহাটে ৩২টি, সাপাহারে ১৮টি এবং পোরশা উপজেলায় ১৭টি পূজামণ্ডপ স্থাপনের কাজ চলছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যদিও গত বছর ৮১৯টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছিল এ জেলায়।
জেলার একাধিক উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমাশিল্পীরা কাদামাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি ও রঙতুলি দিয়ে তাদের হাতের শৈল্পিক ছোঁয়ায় মনের মাধুরী মিশিয়ে তিলতিল করে তৈরি করছেন দেবীদুর্গার অবয়ব। রাত-দিন এক করে দেবী দুর্গার পাশাপাশি নিপুণ হাতে গড়ে তুলছেন কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী আর অসুরের প্রতিমা। যদিও প্রতিমা তৈরির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এখানে রং তুলিতে জানান দিচ্ছেন তাদের হাতের নৈপুণ্য।
অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরী করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাক-ঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা। এছাড়া মণ্ডপগুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি। তবে প্রতিমা তৈরির উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছেন না বলে জানান কারিগররা। আর্থিকভাবে লাভবান না হলেও পৈতৃক পেশা ধরে রাখতে এ কাজ করে যাচ্ছেন কারিগররা।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর রোববার থেকে ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পাঁচদিনব্যাপী সাড়ম্বরে শারদীয় দুর্গাপূজা হবে। এবারে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আসেন গজে (হাতি) চড়ে আর ফিরবেন দোলায়। দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
জেলার নজিপুর পৌরসভায় প্রতিমা তৈরি করছেন দুলাল পাল। তাঁকে সহযোগিতা করছেন তাঁর ভাই মহিন্দ্র পালসহ আরও কয়েকজন। তারা দুই যুগ থেকে এই পেশায় জড়িত। এবার উপকরণের মূল্য বাড়লেও আগের দামেই প্রতিমা তৈরি করে দিচ্ছেন তারা। এবার তারা ৮টি প্রতিমা তৈরি করছেন। যথাসময়ে সব প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হবে বলে জানালেন তারা।
জেলার বদলগাছী উপজেলায় প্রতিমা তৈরি করছেন বাদল পাল নামের এক প্রতিমাশিল্পী। তিনি জানান, “৪২ বছর থেকে এ কাজ করছি। এবারে প্রতিমার দাম খুব কম। এটার দাম দেড় লাখ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ৯০ হাজার টাকায় করতে হচ্ছে। তবে এ বছর কাজের চাপ বেশি। চাপ আগের তুলনায় বেশি হওয়ায় দিনরাত খাটতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসে কাজ করছি। আশা করছি সময়মতো সব কাজ শেষ করতে পারব।”
শহরের কালিতলা মন্দিরে প্রতিমাশিল্পী সুধীরচন্দ্র পাল জানান, মাটির কাজ শেষ হয়েছে। রং তুলির কাজ করা হচ্ছে। প্রতিমাগুলো মনোমুগ্ধকর ও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। আশা করছি সব প্রতিমার কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে।
প্রতিমার কারিগররা জানান, প্রতিমা তৈরির এ কাজ শুধু পেশা নয়, ধর্মীয় আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা থেকে করেন তারা। সেই জন্য দুর্গা মাকে নিজের মায়ের মতো করেই গড়ে তোলেন।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র সরকার এবং পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক পীযূষ কান্তি সরকার বলেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী তিথিতে পূজা শুরু হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর ও সুষ্ঠু আছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় পূজা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
তারা আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের কাছে প্রত্যাশা দর্শনার্থীরা যেন নির্দ্বিধায় নির্বিঘ্নে প্রতিমা দর্শন করতে পারেন। সবাই যেন উৎসবমুখর পরিবেশে পূজার আনন্দ উপভোগ ও উদযাপন করতে পারেন।
আগামী ২ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হোসেন বলেন, জেলায় সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। সকল বিষয় মাথায় রেখে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটা পরিকল্পনা করা আছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। জেলা পুলিশের প্রত্যেকটি সদস্য এই পূজা উৎসবকে ঘিরে তৎপর আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন করতে পারেন সেজন্য শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিটি পূজামণ্ডপসহ আশেপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।