শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ভিসা জটিলতা দূর করার নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে ভিসা জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৮ অক্টোবর) স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণকে মসৃণ ও টেকসই করতে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় তিনি এই নির্দেশনা দেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।
বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘কিছু কিছু দেশে আমাদের ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা রয়েছে, যা আগের সরকারের সময় থেকেই চলমান। প্রধান উপদেষ্টা চান, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অতিরিক্ত উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।’
শফিকুল আলম জানান, পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের নতুন শ্রমবাজার তৈরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক সফরে প্রধান উপদেষ্টা কসোভো ও আলবেনিয়ার প্রেসিডেন্ট ও কসোভোর প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আলোচনায় শ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছেন। তবে এসব দেশে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় ভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
প্রেস সচিব বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের ভিসার জন্য নয়াদিল্লিতে গিয়ে আবেদন করতে হয়। প্রধান উপদেষ্টা চান, এসব জটিলতা দ্রুত দূর হোক।’
শফিকুল আলম আরও জানান, বৈঠকে ফার্মাসিউটিক্যালস, পোশাক ও অন্যান্য ব্যবসা খাতের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। সেখানে আমদানি নীতি, গ্যাস সরবরাহ, ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ, আইসিটি খাতের প্রণোদনা ও মানবসম্পদ উন্নয়নসহ নানা বিষয় আলোচিত হয়।
বিশেষভাবে, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ গ্যাস সরবরাহ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা বলেন, ম্যানমেড ফাইবারসহ শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ধারাবাহিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। এ জন্য রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট সম্প্রসারণসহ নতুন ল্যান্ড বেস টার্মিনাল স্থাপনের দাবি উত্থাপন করা হয়। তারা উল্লেখ করেন, এ ধরনের উদ্যোগ শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। দরকষাকষির সক্ষমতা বাড়াতে সরকার এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে।’
আইসিটি খাত প্রসঙ্গে শফিকুল আলম জানান, প্রচলিত খাতে প্রণোদনা কমিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি নির্ভর খাতে প্রণোদনা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই খাতের কর্মসংস্থান ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শিগগিরই একটি রোডম্যাপ উপস্থাপনের কথা বলেছেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দেশের ব্যাংকিং খাত, মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, রিজার্ভ এখন পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান ও মুদ্রাস্ফীতি ১২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে।