মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার প্রত্যেকেই আদালতের ভুক্তভোগী : গণপূর্ত উপদেষ্টা

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার প্রত্যেকেই ছিলেন আদালতের ভুক্তভোগী। আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া বিষয়ক জাতীয় আলোচনা সভায় বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ কথা বলেন।
গণপূর্ত উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়াটি গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, হেফাজতে নির্যাতনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে সামনে আনবে। আমরা যখন ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্যায়ের শিকার হয়েছিলাম, তখন এসব কাঠামো ছিল না। আমরা সবাই ছিলাম আদালতের ভুক্তভোগী।
আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের গত সাড়ে পনেরো বছরে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না, সব প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে মানবাধিকার কমিশন পর্যন্ত। সেনা সমর্থিত সরকারের সময় একটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে শুধু রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা পূর্ণ হয় ও মানুষের অধিকার হরণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
গণপূর্ত উপদেষ্টা আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় মানবাধিকার কমিশনের একজন পরিচালক জাতিসংঘে চিঠি লিখেছিলেন যে ‘সন্ত্রাসবাদীরা বাংলাদেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে।’ এ বিষয়ে আজও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি আশা করি, আইন মন্ত্রণালয় মানবাধিকার কমিশনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া তৈরির এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি কার্যকর মানবাধিকার সংগঠন গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে, কিন্তু সবগুলো কার্যকর নয়। বাংলাদেশ ছিল সেই তালিকার নিচের দিকে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের আহ্বান জানিয়ে গণপূর্ত উপদেষ্টা বলেন, মনে রাখতে হবে, এটি একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিষয়। সম্মিলিতভাবে কাজ করলে আমাদের ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন করা সম্ভব।
উপদেষ্টা আরও বলেন, এই অল্প সময়ে, আগামী নির্বাচনের আগে আমাদের এসব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশের মানুষ আর কখনো অন্যায়-অবিচারের শিকার না হয় ও ভবিষ্যতে এমন সম্ভাবনাগুলোকে আমরা পরাস্ত করতে পারি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, এটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিগফ্রেড রেংগলি, ডেনিশ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন এন্ডার্স বি. কার্লসেন ও ইউএনডিপি’র রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেফান লিলারসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের আইন, বিচার ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা রোমানা শোয়েগার।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— আইন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা।