বাংলাদেশের তরুণ কৃষি-উদ্যোক্তাদের জন্য সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান

বাংলাদেশের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা, নারী, কৃষক এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের সহায়তার লক্ষ্যে একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের (ইফাদ) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
ইতালির রোমে ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের ফাঁকে ইফাদের প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিওর সঙ্গে বৈঠকে আজ রোববার (১২ অক্টোবর) তিনি এ প্রস্তাব দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানাই। এ ধরনের তহবিল দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবাসহ সামাজিক সমস্যার সমাধান করবে এবং যুবক, কৃষক, নারী এবং মৎস্য শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে।
বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার শিল্প চালুর সহায়তা, আম ও কাঁঠালের রপ্তানি সম্প্রসারণ, জলবায়ু সহনশীল কৃষি উদ্যোক্তা প্রচার এবং মোজারেলা পনিরের মতো দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে মহিষ খামারিদের সহায়তাসহ বিভিন্ন কৌশলগত বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকালে দুই নেতা আলোচনা করেন।
ইফাদের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান প্রধান উপদেষ্টা। কৃষি, সামাজিক ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতার সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা অন্বেষণের জন্য একটি দল পাঠানোরও আমন্ত্রণ জানান।
ইফাদের প্রেসিডেন্ট লারিও বাংলাদেশে সামাজিক ব্যবসায়িক উদ্যোগকে সমর্থন এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সহযোগিতা সম্প্রসারণে ইফাদের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইফাদ বর্তমানে দেশে অর্ধ ডজনেরও বেশি কৃষি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।
প্রধান উপদেষ্টা ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, গুদামজাতকরণ এবং আম ও কাঁঠালের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলের ব্যাপক পরিমাণ রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আম রপ্তানি শুরু করেছি, কিন্তু আমের পরিমাণ এখনও কম। চীন বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ আম ও কাঁঠাল উভয়ই আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং বাংলাদেশের নারী দুগ্ধ খামারিরা কীভাবে মহিষের দুধ থেকে মোজারেলা পনির উৎপাদন করছেন তা তুলে ধরেন। তিনি দেশে পনির এবং অন্যান্য দুগ্ধ উৎপাদন বাড়াতে আইএফএডি’র সহায়তার অনুরোধ জানান।
বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিল্পের অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে বেশিরভাগ বাংলাদেশি জেলে কেবল অগভীর পানিতে কাজ করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখনও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সাহস পাইনি। ইফাদ অর্থায়ন ও প্রযুক্তি ভাগাভাগির মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা করতে পারে।
১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ইফাদের সম্পৃক্ততা শুরু হওয়ার পর থেকে আইএফএডি ৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্মিলিত মূল্যের ৩৭টি প্রকল্পে অংশীদারত্ব করেছে, যার মধ্যে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরাসরি আইএফএডি দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ছয়টি প্রকল্প চলছে, একটি অতিরিক্ত প্রকল্প পাইপলাইনে রয়েছে।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, এসডিজি সমন্বয়ক ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং ইফাদের সহযোগী সহ-সভাপতি ডোনাল ব্রাউন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।