জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, রণক্ষেত্র মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশ করা জুলাই যোদ্ধাদের ধাওয়া দিয়ে সংসদ ভবন এলাকা থেকে বের করে দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এসময় বিক্ষুব্ধ জুলাই যোদ্ধারা সংসদ ভবনের ১২ নম্বর গেট ভেঙে ফেলেন। বাইরে বের হয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক ও বাস ভাঙচুর করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। ভাঙচুর করা গাড়িগুলোর মধ্যে দুটি পুলিশের গাড়ি রয়েছে।
গাড়ি ভাঙচুরের সময় পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বর্তমানে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পুলিশকে লাঠিচার্জ করতেও দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করার পর আন্দোলনকারীরা পিছু হটলেও দূর থেকে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান ঘিরে পুলিশের সঙ্গে জুলাই যোদ্ধাদের সংঘর্ষের পর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের ব্যারিকেড একত্রিত করে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ গেছে। বর্তমানে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সেচ ভবনের সামনে তৈরি করা অস্থায়ী তাঁবুতেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
এক পর্যায়ে জুলাই যোদ্ধাদের লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও টিয়ারশেল ছুড়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে জুলাই যোদ্ধারা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।
নাবিল হোসেন নামের এক জুলাই যোদ্ধা বলেন, আমরা দক্ষিণ প্লাজার ওখানে ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ আমাদের লাঠিচার্জ শুরু করে। আমরা তখন ছোটাছুটি শুরু করি। এক পর্যায়ে আমরা বের হয়ে আসি। আমরা জুলাইতে আহত হয়েছি। গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছি। কিন্তু সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের আবার আহত করল। আমরা বিচার চাই।
লাঠিচার্জে আহত হওয়া একজন জুলাই যোদ্ধা বলেন, আজ আবার আমাকে আহত করা হলো পিটিয়ে। যে দেশের জন্য জুলাই-আগস্টে সংগ্রাম করলাম, সেই দেশের পুলিশ আমাকে আবার আহত করল।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত, অর্থাৎ দুপুর ২টা পর্যন্ত মাঝেমধ্যে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করছিল। জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা ঠিক দুপুর দুটার সময় ১২ নম্বর গেটের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের বলতে থাকেন, ‘আপনারা আস্তে ধীরে এখান থেকে চলে যান। একটি ইট যদি গায়ে লাগে, তখন কী করবেন?’ এক পর্যায়ে তারা বের হয়ে যান।
এ প্রতিবেদন লেখার আগে কয়েকজন জুলাই যোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে এ প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে একজন মো. আমানুল্লাহ। তিনি ৫ আগস্ট চট্টগ্রামে আহত হন। চোখে গুলি লাগে। তিনি রাঙামাটির একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। তবে চাকরির সুবাদে চট্টগ্রাম থাকতেন। তিনি প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে। তবে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তিনি ঢুকতে পারেননি।
আজ শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে মো. আমানুল্লাহ বলেন, আমরা অনেকে এসেছি এখানে। আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা জুলাই যোদ্ধা। কিন্তু সনদে আমাদের সুরক্ষার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। আমাদের নিয়ে রাষ্ট্রের ভাবনা সনদে সুস্পষ্ট করতে হবে। আমরা যারা না মরে আহত হয়ে বেঁচে আছি, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। নতুবা আমরা জুলাই সনদ মানি না।
রুবেল চৌধুরী নামের এক জুলাই যোদ্ধা, যার হাত এবং পায়ে গুলি লেগেছে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়। তিনি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সংসদ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, জুলাই সনদে আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে। প্রত্যেক জুলাই যোদ্ধা ও নিহতদের রাষ্ট্রীয় বীর বলতে হবে। আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
সে সময় গেটের বাইরে থাকা আরেক জুলাই যোদ্ধা রুবেলের কাছে জানতে চান, তারা ভেতরে ঢুকতে পারবেন কিনা। তখন তাকে উদ্দেশ্য করে রুবেল বলেন, আপনারা আরও আগে আসতে পারতেন। আমরা গতকাল রাতে এখানে এসেছি। এখন আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি ছাড়া কেউ ভেতরে ঢুকতে পারবেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী জুলাই যোদ্ধা বলেন, আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে আমরা রাজপথেই থাকব। জুলাই সনদে আমাদের যথাযথ স্বীকৃতি না থাকলে আমাদের জেলে থাকতে হবে একসময়। তারচেয়ে রাজপথই আমাদের জন্য ভালো।
দুপুর ১টার পরপরই কিছু জুলাই যোদ্ধা সংসদ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটকে দেন। সে সময় তারা নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।