জুলাই সনদে দুদক সংস্কারের বিষয়ে যা আছে

দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রায় আট মাস ধরে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তৈরি করা হয় ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’। আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এই সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
জুলাই জাতীয় সনদে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সনদের ৪২ নম্বর ধারায় দুদকে নিয়োগ নিয়ে বলা হয়েছে, যেহেতু বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, সেহেতু সেটিকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে সংবিধানে নিম্নরূপ একটি নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত করা হবে—
(১) দেশে একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন থাকবে এবং এই কমিশনের নিয়োগ ও কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে নিম্নোক্তভাবে একটি ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠন করা হবে—(ক) প্রধান বিচারপতি ব্যতীত আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি (যিনি এই বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটির চেয়ারম্যান হবেন), (খ) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি, (গ) মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, (ঘ) সরকারি কর্ম কমিশনের (সাধারণ) চেয়ারম্যান, (ঙ) জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি, (চ) জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি, (ছ) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত একজন নাগরিক প্রতিনিধি (যিনি দুর্নীতিবিরোধী ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন)।
উক্ত বাছাই কমিটি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের উদ্দেশ্যে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিকট হতে আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ‘ইচ্ছাপত্র’ ও ‘জীবনবৃত্তান্ত’ আহ্বান করাসহ উপযুক্ত প্রার্থীদের জন্য অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এই কমিটি আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনাদের নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে নাম বাছাই করে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরণ এবং নিয়মিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারসহ পাঁচজনের মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী হবেন।
(২) উক্ত কমিটি উপযুক্ত প্রার্থীদের আইন দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করতে তাদের মধ্য হতে একজনকে চেয়ারম্যান এবং অনধিক চারজনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট প্রস্তাব প্রেরণ করবে এবং রাষ্ট্রপতি তাদেরকে কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পরবর্তী চার বছরের জন্য নিয়োগদান করবেন।
(৩) সুপিম কোর্টের কোনো বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হতে পারেন, সেরূপ পদ্ধতি ও কারণ ব্যতীত দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বা অন্য কোনো কমিশনার অপসারিত হবেন না।
(৪) দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার পদে বাছাই প্রক্রিয়া, নিয়োগলাভের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, বয়সসীমা, কর্মের শর্তাবলি ও কর্মপরিধি, কার্যক্রম পর্যালোচনা, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার ব্যবস্থা, পদত্যাগ ও পুনঃনিয়োগ লাভের সুযোগ/অধিকার ইত্যাদি দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জানুয়ারি ২০২৫ অনুযায়ী সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নির্ধারিত হবে।
(৫) দুর্নীতি দমন কমিশন স্বীয় দপ্তরের দায়িত্ব/কর্ম পালনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।