‘জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল শিক্ষকতার পেশায় আসা’

ফেনীর পরশুরাম উপজেলার গুথুমা খান বাহাদুর আব্দুল আজিজ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক বাদশা মিয়া বলেছেন, শিক্ষা জাতীয় মেরুদণ্ড, সে মেরুদণ্ড আজ ধ্বংসের মুখে। বলতে পারেন, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছি শিক্ষকতার পেশায় এসে।'
আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে চলমান বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীর আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বাদশা মিয়া বলেন, গত ১২ তারিখ থেকে আমরা এখানে অবস্থান করছি, সরকারকে আমরা দাবি জানাচ্ছি, কিন্তু সরকার কি এসব দেখছে না? আমাদের শিক্ষা উপদেষ্টাও একজন শিক্ষক। তিনি কি আমাদের দাবিগুলো শুনছেন না?
বাদশা মিয়া আরও বলেন, আমার বাড়ি মাগুরায় কিন্তু আমার চাকরি ফেনীর পশুরামে। পরিবারে চার মেয়ে এক ছেলে আর স্ত্রী, তারা গ্রামে থাকেন। সাড়ে ২২ হাজার টাকা বেতন দিয়ে জীবন চালানো খুব দুষ্কর। আমার নিজেরই প্রতি মাসে মাসে খরচ আছে ৮ থেকে ১০ হাজার। বাকি টাকা দিয়ে কিভাবে কি করবো বলুন?
'আচ্ছা আপনি তো একজন সাংবাদিক, আপনি বলুন ১৫০০ টাকায় বাসা ভাড়া পাওয়া যায়? আপনি পাবেন? ৫০০ টাকার ওষুধ দিয়ে হয়? কেবল আমার ওষুধ হলে হবে, পরিবারের লাগবে না? কে বুঝবে আমাদের এই কথাগুলো, এই কষ্টগুলো- যুক্ত করেন বাদশা মিয়া।
পরশুরামের ঐতিহ্যবাহী স্কুল গুথুমা স্কুল, সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের কাছে খুব পছন্দের শিক্ষক বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, আমার ছাত্র-ছাত্রীরা আমাকে খুব ভালোবাসে, সম্মান করে। কিন্তু এই ভালোবাসা আর সম্মান দিয়ে তো আমাদের সংসার চলে না। এমএ পাশ করে শিক্ষকতা জীবন শুরু করে কেবল সম্মানই পেলাম, সুখ পেলাম না।
বাদশা মিয়ার মতো শত শত শিক্ষক গত ১২ অক্টোবর থেকে কখনো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায়, কখনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বা হাইকোর্টের সামনে মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া, ১ হাজার ৫০০ টাকা মেডিকেল ভাতা ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা ও এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।