‘সাড়ে ১২ হাজার টাকায় কি জীবন চলে?’

‘সি আর আবরার, আর নয় দরকার’; ‘ছাত্র–শিক্ষক–জনতা, গড়ে তোলো একতা’; ‘সারা বাংলার শিক্ষক, এক হও লড়াই করো’; ‘রাজপথে কে রাজপথে কে, শিক্ষক শিক্ষক’; ‘তুমি কে আমি কে, শিক্ষক শিক্ষক’। সকাল থেকেই স্লোগানগুলো শোনা যাচ্ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাতীয় শহীদ মিনারে আসা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মুখে।
মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে সপ্তম দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে কয়েকশ’ শিক্ষককে জাতীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন কামরুন নাহার খানম। যিনি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে ২০২২ সালে নিয়োগ পান। বর্তমানে তার কর্মস্থল জাগীর পাড়া দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা। তার সঙ্গে কথা হয় এনটিভি অনলাইনের।
রাজশাহীর পবায় অবস্থিত মাদ্রাসাটি কামরুন নাহারের বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন তাকে ১২০ টাকা ভাড়া খরচ করে যাতায়াত করতে হয় মাদ্রাসায়। তিনি বলেন, ২০২২ সালে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে এখানে নিয়োগ পাই। গত তিন বছরে আমার সর্বসাকুল্যে বেতন বেড়েছে ৩০০০ টাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে আমার মাসিক বেতন ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ আমার যাতায়াত খরচই লাগে ২ হাজার ৬০০ টাকার মতো।
কামরুন নাহার আরও বলেন, আমি বিয়ে করি নাই। কিন্তু পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে বাবা মায়ের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। বাকি সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে কি জীবন চলে? বৃদ্ধ বাবা-মা, তাদের ওষুধ, সংসারের খরচ, নিজেরও তো ব্যক্তিগত খরচ থাকে। এই টাকায় এসব খরচ মেটানো অসম্ভব।
জাগীর পাড়া দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার এই শিক্ষিকা আরও বলেন, আমার অনেক বন্ধু এনটিআরসিএ'তে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু তারা এই পেশায় আসতে চাইছে না। তাদের কেউ কেউ বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি খুঁজছেন। নারী হিসেবে শিক্ষকতা নিরাপদ পেশা আমাদের জন্য, তাই এখানে আসা। কিন্তু যে বেতন পাচ্ছি তা দিয়ে জীবন চালানো খুব কঠিন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন।
এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করা হয়েছে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে বছরে ২৫ শতাংশ হারে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।