‘নিজের সংসার সামলাব নাকি বাবা-মাকে দেখব?’

তিন দফা দাবিতে দেশের অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর মতো ফরিদপুরের মালেক মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও চলছে কর্মবিরতি। মূল বেতনের ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া ভাতার দাবিতে দেশের অন্যসব শিক্ষকদের মতো রাজধানীর জাতীয় শহীদ মিনারে যোগ দিয়েছেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।
তাদের একজন সদ্য শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা রাজীব কুমার মণ্ডল। মাত্র দুই মাস আগে সহকারী শিক্ষক হিসেবে মালেক মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন রাজীব। চাকরি জীবন কেবল শুরু হলেও ইতোমধ্যে এক সন্তানের বাবা তিনি। বর্তমানে বেতন পাচ্ছেন মাসে সাড়ে ১২ হাজার টাকা।
রাজীব বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি খুলনায়, বর্তমানে ফরিদপুরে মালেক মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছি। আমার একটা ছোট বাচ্চা রয়েছে। তিনজনের ছোট্ট পরিবারে এ বেতন দিয়ে কিভাবে চলে বলুন?
রাজীব আরও বলেন, আপনি কোথাও বলতে পারবেন ১৫০০ টাকায় বাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে? গ্রামেও পাওয়া যায় না, সর্বনিম্ন দুই থেকে তিন হাজার টাকা লাগে। তিন হাজার টাকা যদি বাড়ি ভাড়াই দেই, তাহলে যাতায়াত, বাজার, বাচ্চার জন্য তো নিয়মিত খরচ রয়েছে। এসব কিছু দিয়ে বাবা-মায়ের জন্য কোনো টাকা পাঠানোর সুযোগ থাকে না। নিজের সংসার সামলাব নাকি বাবা-মাকে দেখব?
রাজীব কুমার বলেন, নতুন পরিবার, ভাড়া বাসায় থাকা, ছোট একটা বাচ্চা সব কিছু মিলিয়ে আসলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। দুই জনের জন্য বাজার করতেই হিমশিম খেতে হয়, বাজারের দাম তো জানেনই। সব মিলিয়ে বলতে পারেন আমাদের জন্য এই আন্দোলন আসলে বেঁচে থাকার।
রাজীব আরও বলেন, আমাদের শিক্ষকরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলা কর্মবিরতি অনির্দিষ্টকাল চলবে। আগামীকাল রোববার থেকে শিক্ষক–কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরাও নিজ নিজ জায়গা থেকে এই আন্দোলনে যোগ দেবেন।
এদিকে আমরণ কর্মসূচি শুরুর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, আমাদের দাবি একটাই। ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া দিতে হবে। শিক্ষকেরা আর কোনো কথা শুনতে চান না। এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের ব্যানারে গত ১২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেদিন সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হলেও দুপুরে পুলিশের অনুরোধে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলে যান।
শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি অংশ প্রেস ক্লাবের সামনেই অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে, জলকামানের পানি ছিটিয়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের সরিয়ে দেয়।
শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশের হামলার’ প্রতিবাদে ১৩ অক্টোবর থেকে সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করা হয়। ১৪ অক্টোবর বিকেলে তারা পদযাত্রা নিয়ে শহীদ মিনার থেকে সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, তবে হাইকোর্টের মাজার ফটকের সামনে পুলিশ পদযাত্রা আটকে দেয়। রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর সরে গিয়ে বাকি রাত শহীদ মিনারে অবস্থান করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
১৫ অক্টোবর দুপুর ১২টার মধ্যে সরকার দাবি মেনে প্রজ্ঞাপন জারি না করলে এরপর ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচির মাধ্যমে শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলেন জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫০০ টাকা বাড়িয়েছে সরকার; তবে গত ৫ অক্টোবর এই ঘোষণা প্রকাশ্যে এলে শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের ডাক দেন। এরপর গত ৬ অক্টোবর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত দুই হাজার বা তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন পান। তারা মূল বেতনের সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। আর ১ হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা পেতেন, যা বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে ২৫ শতাংশ হারে বছরে দুটি উৎসব ভাতা পেলেও গত মে মাসে বাড়ানোর পর তারা এবং এমপিওভুক্ত কর্মচারীরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন।