ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা মানছেন না ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর জেলেরা

মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর অনেক জেলে পদ্মায় মাছ শিকার করছেন নিয়মিত। সময়মতো সরকারি সহায়তা না পাওয়া ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে নদীতে নামতে হচ্ছে বলে দাবি তাদের। তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
পদ্মা পাড়ে গিয়ে দেখে বোঝার উপায় নেই যে মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। বরং তার উল্টোটাই মনে হবে। এই সময়েও দুই জেলার পদ্মায় অর্ধশতাধিক পয়েন্টে অসংখ্য জেলে ইলিশ শিকার করছেন।
জেলেদের দাবি, সরকারি প্রণোদনা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই জেল-জরিমানা উপেক্ষা করে নদীতে নামছেন তারা। তাদের অনেকের মৎস্য কার্ড থাকার পরও সরকারের সহায়তা পাননি।
নাম প্রকাশে একাধিক জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারের দেওয়া ২৫ কেজি চাল দিয়ে পরিবার নিয়ে চলাটা কষ্টকর হয়ে যায়। নৌকা ও জাল মেরামতের জন্য বিভিন্ন আড়ৎ ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন অনেকেই। এ সময় আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় জেলেরা ঋণের চাপে পড়েছেন, তাই বাধ্য হয়ে নদীতে যাচ্ছেন তারা।
ফরিদপুরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের জেলে সাইফুল্লাহ, রবিউল শেখ, হিরামন দাসসহ আরও বেশ কয়েকজন বলেন, সরকারি সহায়তা সব জেলেদের জন্য নয়। এমনকি যাদের কার্ড আছে তাদের মধ্যে অনেকেই এখনো চাল পায়নি। বলা হয়েছে ২৫ কেজি, কিন্তু যে চাল টুকু পেয়েছি তা ২০ কেজির বেশি নয়।
তারা আরও জানান, নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। শুধু ইলিশ নয়, অন্য মাছেরও দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।
মৎস্য বিভাগ বলছে, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলায় ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত জেলের সংখ্যা ৮ হাজার ১২ জন। এর বাইরেও দুই জেলায় আরও পাঁচ হাজারের বেশি জেলে রয়েছেন, যাদের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম মাছ শিকার।
সরকারের ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে শতাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অর্ধশতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে বলে দুই জেলার স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ফরিদপুর জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরদার জানান, ‘ইলিশ আহরণে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। অসাধু মাছ শিকারীদের দেওয়া হচ্ছে জেল-জরিমানা। ইলিশের প্রজননের সময়ে যে নিষেধাজ্ঞা, এই সময়ে সরকারি যে মানবিক সহায়তা দিয়েছে তা আমরা জেলেদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’