মৎস্য অফিসের যোগসাজশে ঝালকাঠিতে চলছে মা ইলিশ শিকার

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে দেশে ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে বাকি আরও পাঁচ দিন। তবে ঝালকাঠিতে প্রশাসনের অভিযান চললেও মাঠপর্যায়ে অনিয়ম, দুর্নীতি ও মৎস্য দপ্তরের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে অব্যাহত রয়েছে মা ইলিশ শিকার— এমন অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে।
জানা গেছে, ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন বেশ কিছু অভিযান চালালেও নদীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় অভিযানে না যাওয়ায় সেখানে প্রকাশ্যে চলছে ইলিশ ধরা। অভিযোগ রয়েছে, মৎস্য কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই মৌসুমি কিছু জেলে দিনরাত ইলিশ শিকার করছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ দিনে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলায় ৩৭টি টিম অভিযান চালিয়ে ৩৭টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। এতে ১৬টি মামলা দায়ের, ১৮ জন জেলেকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৭ হাজার ৫৪০ মিটার কারেন্টজাল ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া ২১৬ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে। এসব অভিযানের কৃতিত্ব ইউএনও, এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলে সমিতির সদস্যরা। তবে জেলেদের অভিযোগ— জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল ও সহকারী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নয়ন মজুমদারের যোগসাজশে কিছু মৌসুমী জেলে গোপনে মা ইলিশ শিকার করছে। তারা জানান, “অভিযানের নৌযান অনেক সময় ঘাটে বাধা থাকে। নদীতে তাদের চোখের সামনেই ইলিশ ধরা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।” ঝালকাঠির ২৪৮ কিলোমিটার নদীপথে সুগন্ধা, বিষখালী ও হলতা নদীতে ইলিশের বিচরণ সবচেয়ে বেশি। প্রশাসনের টহল চললেও এসব নদীর নির্দিষ্ট অংশে প্রায় প্রতিদিনই চলছে মা ইলিশ শিকার।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম মণ্ডল বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি, জেলেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারপরও মাঝে মধ্যে কিছু অসাধু মৌসুমি জেলেরা নদীতে ইলিশ শিকার করতে নামে বলে অভিযোগ পেয়েছি। তবে আমার যখন যাই তখন তাদের পাই না। যাদের পাই তাদের আটক করে জেল দেওয়া হয়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আরা মৌরি বলেন, “নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে রাজাপুর উপজেলায় ১৪ জন জেলেকে আটক করে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগ স্বীকার করে সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা নয়ন মজুমদার বলেন, “কাজ করলে মানুষ সমালোচনা করবেই। আমি যদি জেলা মৎস্য কর্মকর্তার মতো ১৬–১৭ দিন বসে সময় কাটাতাম, তাহলে হয়তো অভিযোগ আসত না।”

নয়ন মজুমদার আরও বলেন, “রিপোর্ট ঠিক আছে। সেটা নিয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না। তবে যারা মূল, যাদের মনিটরিং করার কথা, আমরা তো ফিল্ডে কাজ করি; সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা হিসাবে যতটুকু করি সেগুলোতো আমার করা উচিত না। কিন্তু সদর উপজেলা কর্মকর্তা একা এবং তার নলছিটি উপজেলায় দায়িত্ব; তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য নদীতে থাকতে হয়। এরকম অভিযোগ তো ভুঁড়ি ভুঁড়ি আসবে।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আমরা মা ইলিশ রক্ষায় প্রতিদিন নদীতে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুত ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও মৎস্য বিভাগ সবাইকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার শেষ দিন পর্যন্ত ঝালকাঠিতে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।