‘কীভাবে বোঝাই যে ওদের বাবা আর কখনও জাগবে না’
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে নিহত আবুল কালাম আজাদের (৪০) জানাজা গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় সম্পন্ন হয়েছে। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর, ২০২৫) সকালে উপজেলার মোক্তারের চর পূর্ব পোড়াগাছা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে নিহতের জানাজা শেষে তাকে নড়িয়া কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে রাত ১টার দিকে তার মরদেহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়।
আবুল কালামের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অতি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
নিহত আবুল কালাম আজাদ ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে। চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ভাইদের মধ্যে সবার ছোট। প্রায় ২০ বছর আগে তার বাবা ও মা মারা গেলে তিনি বড় ভাই ও বোনদের কাছে বড় হন।
আরও পড়ুন : মেট্রোরেলসহ সব ফ্লাইওভারের বিয়ারিং প্যাডের মান নির্ণয়ে হাইকোর্টে রিট
আরও পড়ুন : মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত যুবকের পরিচয় মিলেছে
সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে ২০১২ সালে তিনি মালয়েশিয়ায় যান এবং ফিরে এসে ২০১৮ সালে আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়েসন্তান রয়েছে। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন এবং ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন।
প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে আসেন আবুল কালাম। এরপর কাজের জন্য সেখান থেকে বের হন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ খুলে নিচে পড়ে যায়। সেটির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই আবুল কালাম আজাদ প্রাণ হারান।
জানাজার সময় স্ত্রী আইরিন আক্তার পিয়া আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘আমার সন্তানরা এখনও বুঝতে পারেনি, তাদের বাবা আর ফিরবে না। ওরা বলে, বাবা ঘুমাচ্ছে মা, তুমি কান্না করো না। আমি কীভাবে ওদের বোঝাই যে, ওদের বাবা আর কখনো জাগবে না! আবুল কালামই ছিল আমাদের একমাত্র ভরসা, এখন আমি ও সন্তানরা একেবারে দিশেহারা হয়ে গেছি।’ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মেয়েটার চোখের সমস্যা ছিল, কয়েক দিন পরেই বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করার কথা ছিল।
চাচাতো ভাই আব্দুল গণি চোকদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারের অবহেলার কারণে আমার ভাই মারা গেল। এখন এর দায় কে নেবে?’
নড়িয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাকী দাস বলেন, ‘আবুল কালামের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে তার জানাজা ও দাফনে অংশ নিয়েছি। আমরা সার্বক্ষণিক তার পরিবারের পাশে রয়েছি। পরিবারের লোকজন যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনকে পাশে পাবে।’
আরও পড়ুন : মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় নিহত ১, আর্থিক সহায়তা-চাকরি দেওয়ার ঘোষণা
আরও পড়ুন : পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারী নিহত, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ
মেট্রোরেলের সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, তাকে মেট্রোরেলের পক্ষ হতে নিহতের পরিবারকে সমবেদনা ও দাফন কার্যক্রমে অংশ নিতে পাঠানো হয়েছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের জন্য সর্বোচ্চটুকু করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

আব্দুল আজিজ শিশির, শরীয়তপুর