ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহার এবং রক্ত-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় ডক্টরস কমিউনিটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উলিপুর পৌরশহরের মসজিদুল হুদা মোড়ে ‘সচেতন ছাত্র জনতা’ ব্যানারে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে নিহত নবজাতকের নানি রুবিনা বেগম, সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে মতলেবুর রহমান মঞ্জু, ছাত্রনেতা নাজমুল হাসান, মনির হোসাইন, সারফারাজ সৌরভ, আসাদুজ্জামান আসাদ ও রোমিও হাসানসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, ডক্টরস কমিউনিটি ক্লিনিককে বাইরে থেকে আধুনিক হাসপাতাল মনে হলেও, ভেতরে চলছে প্রশিক্ষণহীন কর্মীদের দিয়ে ভুল চিকিৎসা। তাদের দাবি, এই ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা এর আগেও কয়েকবার ঘটেছে এবং প্রতিবারই প্রভাবশালী মহলের চাপ ও টাকার প্রভাবে বিষয়টি গোপন বা সমঝোতার মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা ডক্টরসসহ উলিপুরের সব বেসরকারি ক্লিনিকে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভুল চিকিৎসা ও রক্ত বাণিজ্যের নামে মানবজীবন নিয়ে খেলা বরদাস্ত করা হবে না। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে উলিপুর অচল করে দেওয়ার মতো বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: আজ দুই লাখের নিচে বিক্রি হচ্ছে এক ভরি স্বর্ণ
নবজাতকের বাবা বেলাল বকসী বলেন, আমার সন্তানকে মেরে ফেলা হয়েছে। এর দায় কেউ এড়াতে পারবে না। আমি ন্যায়বিচার চাই, যেন আর কোনো পরিবার এভাবে সন্তান না হারায়।
পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২০ অক্টোবর নারিকেলবাড়ি এলাকার বেলাল বকসীর স্ত্রী মিথী বেগম আক্তার প্রসব ব্যথা নিয়ে ক্লিনিকে ভর্তি হন। নরমাল প্রসব না হওয়ায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। পরিবার দাবি করেছে, সেখানে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই দুই নার্স ও দুজন পুরুষ কর্মী মিলে প্রসব করানোর চেষ্টা চালান।
পরিবার আরও অভিযোগ করেছে, মায়ের জরায়ু কেটে ফেলার সময় কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না এবং প্রয়োজনীয় অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার না করেই ১২টি সেলাই দেওয়া হয়। নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে প্রথমে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে এবং পরের দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে ২১ অক্টোবর শিশুটি মারা যায়। বর্তমানে মিথী বেগমের শারীরিক অবস্থাও গুরুতর।
আরও পড়ুন: শেষ প্রচেষ্টাও ব্যর্থ, থমকে গেল পাকিস্তান–আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা
এ বিষয়ে ডক্টরস কমিউনিটি ক্লিনিকের পরিচালক ডা. লোকমান হাকিম বলেন, রোগী মিথী বেগমের এটি প্রথম সন্তান ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে সিজার না করার অনুরোধ ছিল। পরে প্রসব জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শে অপারেশন করা হয়। নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদরে পাঠানো হয়েছে। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ সঠিক নয়।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তানভীরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম (চিলমারী- উলিপুর)