কুমিল্লার চার গ্রামে পান চাষে রঙিন সমৃদ্ধি, ঘুরে দাঁড়াচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি
বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই উৎসব, আড্ডা, চায়ের দোকান আর গৃহস্থের বাড়িতে পান খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। এই পান চাষেই কুমিল্লার চারটি গ্রামে এসেছে রঙিন সমৃদ্ধি। কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বরুড়া সীমান্তবর্তী কাদুটি, পাইকের করতলা, চাঁদসার ও লনাই গ্রামে প্রায় শত বছর ধরে পানের চাষ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয় কাদুটি গ্রামে। এই গ্রামের ৮০ শতাংশ মানুষ পান চাষি, ব্যবসায়ী ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। এখানে মহালনী, চালতাগোটা ও সাচি জাতের পানের চাষ হয়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের টুকরোতে খুব যত্নে বেড়ে উঠেছে পানের চারা। সবুজ পান চারায় যেন হাসছে পুরো জমি। ওপরে দেওয়া হয়েছে খড়ের হালকা ছাউনি, যার ফাঁক দিয়ে হালকা সোনালি আলো পানের পাতায় পড়ে লুকোচুরি খেলছে।
আরও পড়ুন : জ্যামাইকায় ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯
কাদুটি গ্রামের পানচাষি ইউনুছ মিয়া বলেন, এক একরের বেশি জমিতে পান চাষ করেছেন তিনি। খরচ হয়েছে সাড়ে আট লাখ টাকা, বিক্রি হয়েছে দ্বিগুণের বেশি। একটি জমিতে একবার পান চাষ করলে তা ১০ বছর বা তারও বেশি সময় ফলন দেয় বলেও জানান তিনি।
আরেক কৃষক আবুল বাশার বলেন, আমাদের কাদুটি গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ পান চাষে জড়িত। এই পান ১৫ দিন পর পর উঠানো হয়। পান চাষের কারণে এলাকায় মানুষ সচ্ছল হয়েছে। এই গ্রামের পান কাদুটি, নবাবপুর, গৌরীপুর, সাচার, বদরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়। আগে পানের ভিড়া ২০০-২৬০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কৃষক কামাল হোসেন বলেন, ৩০ শতক জমিতে পান চাষ করতে তার চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ভালো লাভ পেয়েছেন। তবে বর্তমানে পানের দাম কমায় তারা বেকায়দায় পড়েছেন।
ব্যবসায়ী রমিজ মিয়া বলেন, যে পান ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবার ও অন্যান্য খরচ বাড়ায় কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন।
আরও পড়ুন : নীতিনির্ধারণে নমনীয়তা ও নাগরিক দায়িত্বের ওপর প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বারোপ
পাইকারি ব্যবসায়ী মিন্টু চন্দ্র দত্ত বলেন, কাদুটি, ঝলম, মাধাইয়া ও বদরপুরসহ বিভিন্ন হাট থেকে তিনি পান কেনেন। এখানের পান বিভিন্ন উপজেলায় যায়। এই পানের স্বাদ চমৎকার।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, এই পানের রোগ কম, ফলন ভালো হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষক দাম কম পাচ্ছেন। কিছুদিন পর সে সমস্যা কেটে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, চান্দিনা উপজেলায় ৪২ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। কাদুটিতে হয় ১২ হেক্টর জমিতে। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৩ লাখ টাকা আর বিক্রি হয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা।
মোরশেদ আলম আরও বলেন, এটি ছায়া জাতীয় ফসল। সরাসরি আলো পড়লে ফলন ভালো হয় না। বৃষ্টি বেশি হওয়ায় এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে। এজন্য এখন একটু দাম কম। তবে সামনের শীতে দাম আরও বাড়বে। চান্দিনায় পান চাষের আরও সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)