শতবর্ষী পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধনে পুলিশের বাধা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে আয়োজিত এলাকাবাসীর শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হয়, বিজয়নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মামুন এসে মানববন্ধনের ব্যানার ছিনিয়ে নেন। পুলিশের এমন অস্বাভাবিক আচরণে মুহূর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশ ও স্থানীয় জনতা মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
গতকাল রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের সাতবর্গ বাজার এলাকায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, শত বছর ধরে সাতবর্গ এলাকার ওই পুকুরটি আশপাশের মানুষের গোসল, ওজু ও নিত্যপ্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সম্প্রতি একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে এটি ভরাটের চেষ্টা শুরু করলে পুকুরটি রক্ষার দাবিতে এলাকাবাসী শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের আয়োজন করেন।
অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ, মানববন্ধন চলাকালে পুকুর ভরাটের পক্ষের কয়েকজন এসে বাকবিতণ্ডা শুরু করে। এসময় বিজয়নগর থানার এসআই মামুন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নেন। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পুলিশ-জনতা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় ধস্তাধস্তি, হট্টগোল ও বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটে। পুলিশের এমন আচরণে বিস্মিত এলাকাবাসী বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে পুকুর রক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ এসে মানববন্ধনের ব্যানার কেড়ে নিয়ে শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে।
উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান, ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে এসআই মামুন তাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
মানববন্ধনে স্থানীয় জুরু মিয়া, হারুন মিয়া, হিরন মিয়া, এমরানসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন। তারা বলেন, ‘শত বছরের পুরনো এই পুকুরটি শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, এটি আমাদের জীবনের অংশ। পুকুর ভরাট হলে আমরা পানির সংকটে পড়ব, পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হবে।’
এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, জলাধার সংরক্ষণ আইন অমান্য করে পুকুর ভরাট করা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে অবৈধ ভরাট বন্ধ করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলামও এ বিষয়ে ভিডিও বক্তব্য দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, ‘এসআই মামুন ঘটনাস্থলে কিছুটা অপেশাদার আচরণ করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শাহনেওয়াজ শাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া (সদর-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর)