মুন্সীগঞ্জে ৬৫ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ডিবির ওসি বদলি
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ৬৫ লাখ টাকা ডাকাতি ও ডিবির দুই সদস্য গ্রেপ্তারের ঘটনায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলা ডিবির (উত্তর) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিনকে। তাকে বদলি করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণে। আর দক্ষিণের ওসি সাইদুল ইসলামকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান।
গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের তিন দোকান এলাকায় ডিবি পরিচয়ে দুর্বৃত্তরা সিঙ্গাপুর প্রবাসী আকাশ অসীমের (৪৮) কাছ থেকে লুট করেন নগদ ৬৫ লাখ টাকা। তিনি ঢাকার দোহার উপজেলার পালামগঞ্জ এলাকার মৃত অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে।
ভুক্তভোগী আকাশ অসীম জানান, তিনি ও তার বড় ভাই বিমল চন্দ্র দাস হরি (৫৬) স্থানীয়ভাবে পুরোনো স্বর্ণ কেনাবেচার ব্যবসা করে আসছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) তারা শ্রীনগর বাজারের ‘শ্রীনগর স্বর্ণালয়’ নামের দোকানদার রাজীব দাসের কাছে ২১ ক্যারটের ৩৯ ভরি স্বর্ণ বিক্রি করেন। পরের দিন শুক্রবার ভোরে ওই স্বর্ণ বিক্রির ৬৫ লাখ টাকা নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে দোহার উপজেলার জয়পাড়া এলাকার উদ্দেশে রওনা হন। পথে সকাল ৭টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের তিন দোকান এলাকায় পৌঁছালে একটি সাদা মাইক্রোবাস তাদের অটোরিকশার গতি রোধ করে। গাড়ি থেকে নেমে ৮-৯ জন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন। তাদের একজনের গায়ে ‘ডিবি’ লেখা জ্যাকেট ছিল এবং কোমরে আগ্নেয়াস্ত্র ঝুলছিল। তখন ডিবির আইডি কার্ড দেখতে চাইলে তাদের এলোপাতাড়ি মারধর করে স্বর্ণ বিক্রির ৬৫ লাখ টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয় ও দুজনকে হাতকড়া পরিয়ে হাইয়েস মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।
এরপর দুর্বৃত্তরা আকাশ অসীমের কাছ থেকে একটি ৩০ হাজার টাকার মোবাইল ফোনসেট ও তার ভাইয়ের কাছ থেকে একটি ২০ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নেয়। এরপর আকাশ অসীমকে পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তের পুরাতন ফেরিঘাটে ফেলে তার ভাইকে নিয়ে মাওয়ার দিকে চলে যায়। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর বিমল চন্দ্র দাসকেও পদ্মা সেতু টোলপ্লাজার কাছে ফেলে যায় তারা।
এ ঘটনার পর আকাশ অসীম শ্রীনগর থানায় একটি মামলা করলে প্রাথমিক তদন্তে নেমেই এ ঘটনায় প্রকৃত ডিবি পুলিশের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায় পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য হেলাল উদ্দিন ও শরিয়ত উল্লাহ শাওনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সামনে চলে আসায় বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বিষয়টি ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামানকে অবহিত করলে কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে দ্রুত তিনি ঢাকা জেলা ডিবির (উত্তর) কার্যালয়ে পাঠান মুন্সীগঞ্জ জেলা ডিবির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম খানকে। তিনি জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা মাত্রই তাদের মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলা হয়।
এরপর ডিবির ওই দুই সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আটক করা হয় র্যাব-১০ সিপিসি ২-এর সদস্য ফরিদ, মিজান ও মুকিদুলকে। এ ছাড়া ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসচালক কবির হোসেনকেও আটক করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ইমেজ সংকটে পড়ে ঢাকা জেলা ডিবি পুলিশ। উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সরিয়ে দেওয়া হয় ডিবির ওসি জালাল উদ্দিনকে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান বলেন, পুলিশকে পুলিশের মতো থাকতে হবে। যারা অপরাধ দমনের পরিবর্তে অপরাধে জড়িয়ে পড়বে তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় নেই।

জাহিদুর রহমান