‘রূপবান শিম’ চাষে কৃষকের চারগুণ লাভ
গ্রীষ্মকালীন ‘রূপবান’ জাতের শিম চাষ করে শীতকালীন শিমের চেয়ে চারগুণ বেশি লাভবান হচ্ছেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার কৃষকরা। সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা পাহাড়ে এখন যতদূর চোখ যায়, ততদূর বেগুনি রঙের রূপবান শিমের ফুল আর থোকা-থোকা শিম ঝুলতে দেখা যায়। মৌসুমের শুরুতে এই শিম পাইকারিতে প্রতি কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১২০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফিরেছে। তবে টানা বৃষ্টিতে ফুল ঝরে যাওয়ায় প্রত্যাশার চেয়ে কিছুটা কম লাভ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
শিম উৎপাদনের জন্য সীতাকুণ্ড বিখ্যাত। এখানে শীতকালীন ছুরি, লইট্টা ও বাঁটা শিমের চাহিদা থাকলেও গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমও সুস্বাদু ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর চাষ বাড়ছে।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা জানান, প্রতি বছর মে-জুন মাসে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ শুরু হয় এবং জুলাই-আগস্ট মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফলন তোলা চলে। ডিসেম্বরে পানি সংকটের কারণে রূপবান শিমের উৎপাদন কমতে থাকে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর আগেও এই উপজেলায় মাত্র সাত হেক্টর জমিতে রূপবান শিম চাষ হলেও ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে গত বছর তা এক লাফে ৩০ হেক্টরে পৌঁছেছে। এ বছরও একই পরিমাণ জমিতে এই শিমের চাষ করে কৃষক লাভবান হয়েছেন। এসব জমি থেকে ১৭০ টনের বেশি শিম চাষ হয়।
কৃষক ইউসুফ নবী ৩০ শতক জমিতে রূপবান শিম চাষ করেছেন। তিনি জানান, জমি চাষাবাদে তার আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন এবং আগামী দেড় মাসে আরও অন্তত ১ লাখ টাকার শিম বিক্রি হতে পারে। তিনি নিশ্চিত করেন, রূপবান শিম চাষে চারগুণ লাভ হয়েছে।
ধর্মপুর এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে পাহাড়ে এই শিম চাষ করছেন। কোনো সেচের চিন্তা বা খাজনা দেওয়া লাগে না। এই জমি থেকে এরই মধ্যে ৮ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছি। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে শিম নিয়ে যাচ্ছেন। রূপবান শিম চাষে আমাদের লাভ অন্তত চারগুণ বেশি।
ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন ঘোষ জানান, ছোট দারোগার হাট থেকে ছলিমপুর পর্যন্ত পাহাড়জুড়ে চার শতাধিক স্পটে এ শিম চাষ করা হয়েছে। প্রতি হাটে (সপ্তাহে দুদিন) ইউনিয়ন থেকে অন্তত ১৫ টন শিম বিক্রি করেন কৃষকেরা। এখন ১৫ টন শিমের মূল্য ১৮-২২ লাখ টাকা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই শিম বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লা জানান, ২০১০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া রূপবান শিম চাষ বর্তমানে ৩০ হেক্টর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় সব কৃষকই খুশি, তাই ভবিষ্যতে এই শিমের চাষ আরও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)