সড়কের পাশে জন্ম, প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে রেখে পালালেন মা
এক গর্ভবতী নারীর প্রসব ব্যথা উঠলে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ পুরাতন বাজার এলাকায় গ্রামীণ বাজারে সড়কের পাশেই একটি ফুটফুটে ছেলে শিশু জন্ম নেয়। গতকাল মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী নবজাতক ও তার মাকে নিয়ে একটি বাড়িতে আশ্রয় দেয়। সেখানে তাদের সেবাযত্ন শেষে পরিচয় জানতে চাওয়া হলেও ওই মা নিজের ঠিকানা ও পরিচয় দেননি। পরে নবজাতক ছেলে সন্তানকে প্রবাসীর এক স্ত্রীর কাছে দিয়ে তিনি চলে যান। ঘটনা জানাজানির পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
শিশুটিকে বর্তমানে গাড়াগঞ্জের মধুপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ফজলুর করিমের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুনের কাছে রাখা হয়েছে। এদিন রাত ৮টার দিকে তারা শিশুটিকে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শিশুটি সুস্থ থাকায় তাকে পরিবারটির কাছেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
প্রবাসীর স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন বলেন, নবজাতকটির মা ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন। এ সময় তার প্রসব ব্যথা উঠলে বাজার এলাকার সড়কের পাশেই শিশুটির জন্ম হয়। আমি খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে তাদের আমার বাড়িতে নিয়ে এসে সেবাযত্ন করি। খবর পেয়ে এলাকার মানুষ বাড়িতে ভিড় করতে থাকেন। ওই মায়ের কাছে শিশুটির বাবা ও ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি জানান, বাচ্চার বাবা দেশের বাইরে থাকেন। কিন্তু ওনার বাড়ির ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন গ্রামের নাম বলতে থাকেন। এমনকি তার পরিবারের মানুষের মোবাইলফোন নম্বর চাইলেও দেননি। ওই মহিলা নিজের কোনো নাম এমনকি ঠিকানাও বলেননি।
আনোয়ারা খাতুন আরও বলেন, একপর্যায়ে আমি বলি, আপনি বাচ্চা নিতে না চাইলে আমাকে দিয়ে যান। তখন সন্তানকে দিয়ে তিনি চলে যাওয়ার সময় বলেন, ‘আপনি আমার বড় বোনের মতো কাজ করলেন। আপনি আমার খুব উপকার করলেন। আমি মাঝেমধ্যে দেখতে আসব।’
ওই মা যদি পরবর্তীতে নিজের সন্তানকে ফেরত নেওয়ার দাবি করেন, এমন প্রশ্নে আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘আমি নিজের সন্তানের মতো শিশুটিকে রাখব। সে তো চলে গেছে। সন্তানের প্রয়োজন হলে সে এভাবে আমাকে দিয়ে যেত না।’
এদিকে, ওই মায়ের এমন কাণ্ডে মনিরুল ইসলাম নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ওই নারী হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সুরাব হোসেনের দোকানে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। আমরা ধারণা করছি নবজাতকের মা সোহরাব ডাক্তারের পরিচিত কেউ।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সোহরাব হোসেন বলেন, আমার দোকানের পাশেই শিশুটি জন্ম নেয়। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে শিশু জন্ম নেওয়ার বিষয়টি দেখতে পাই। আমি ওই নারীকে চিনি না।
শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারিয়া তন্নি বলেন, শিশুটির ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। রাত ৮টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শিশুটির ওজন দুই কেজি ৮০০ গ্রাম। শিশুটি সুস্থ থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, খবরটি এখন শুনলাম। এ ব্যাপারে আমি খোঁজখবর নিচ্ছি।

মনজুরুল আহসান, ঝিনাইদহ (সদর-কালীগঞ্জ-কোটচাঁদপুর)