‘আমার ছেলের জীবনটা শেষ করে দিল’
‘আমার ছেলের জীবনটা শেষ করে দিল’—কেঁদে কেঁদে বলছিলেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের চিওড়া গ্রামের ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ইসহাক মিয়া।
গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাত ৩টায় ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার ছেলে ইমরান হোসেনকে (১৫) গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হলেও অংশ নিতে পারেনি। ইমরানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ইমরানের বাবা ইসহাক মিয়া বলেন, আমার ছেলে এমন কোনো অপরাধী না যে দরজা ভেঙে ধরে নিতে হবে। লেখাপড়া ছাড়া কিছু বোঝে না। এলাকায় কেউ বলতে পারবে না আমরা রাজনীতি করি।
ইসহাক মিয়ার অভিযোগ—শুধু সন্দেহের বশে ছেলেকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। ছেলের পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিয়ে থানায় গেলেও কোনোভাবেই তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিন জামিন আবেদনের আনুষ্ঠানিকতায় সময় চলে যায়। বাড়ি ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। আবার আগামী রোববার (২৩ নভেম্বর) আদালতে যাবেন।
ঢালুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন মজুমদার বলেন, ইমরান নিয়মিত ও শান্ত স্বভাবের শিক্ষার্থী। রাজনীতিতে যুক্ত থাকার তথ্য আমাদের কাছে নেই।
সম্প্রতি নাঙ্গলকোটে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একটি মশাল মিছিলকে কেন্দ্র করে উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৫০-৬০ জনকে আসামি করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় ইমরানকে ৬ নম্বর আসামি করা হয়।
ইমরান মশাল মিছিল অংশ নিয়েছে এমন তথ্য-প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে এসআই আলমগীরের বলেন, মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে এমন কোনো ছবি বা ভিডিও আমাদের কাছে নেই। তবে যাদের গ্রেপ্তার করেছি, তাদের তথ্যে তার নাম পেয়েছি।
ইমরান রাজনীতিতে সম্পৃক্ত এমন কোনো প্রমাণ আছে কি না—এই প্রশ্নের জবাবে এসআই আলমগীর বলেন, এমন তথ্য নেই। পরীক্ষার বিষয়টিও আমাদের জানা ছিল না।
এজাহারে বলা হয়েছে, মনতলী ব্রিজ এলাকায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগের সদস্যরা ঝটিকা মশাল মিছিল করে সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়। গ্রেপ্তার করা এক ছাত্রলীগকর্মীর জবানবন্দিতে ইমরানের নাম আসে।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক বলেন, একজন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ও কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মীর তথ্যেই ইমরানকে গ্রেপ্তার করেছি। নিয়ম মেনে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে ইমরানের পরীক্ষার বিষয়টি তার জানা ছিল না।
এ বিষয়ে কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, ছাত্রলীগের মিছিলে উপস্থিতি ছিল বলে সে (ইমরান) নিজেই স্বীকার করেছে। তাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন বিষয়টি আদালতের কাছে।
ইমরানের বাবা বলেছেন, তিনি ন্যায়বিচারের জন্য আদালতে লড়াই চালিয়ে যাবেন।

মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা