দেশবরেণ্য আলেম মাওলানা মাহমুদুল হাসান আল মাদানী আর নেই
নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ, দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন, ইসলামিক স্কলার, শায়খুল হাদিস হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান আল মাদানী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি হঠাৎ অসুস্থ বোধ করেন। এসময় স্বজনরা তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মাওলানা মাহমুদুল হাসান আল মাদানীর মৃত্যুতে তার হাজার হাজার ছাত্র, ভক্ত অনুরাগী এবং স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুকালে স্ত্রী, তিন পুত্র ও পাঁচ কন্যা সহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বুধবার সকাল ৯টায় নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত মুসল্লিদের মাঝে কান্নার রোল পড়ে যায়। তার পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরসীতা গ্রামে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বরেণ্য এই আলেমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিশ্ববরেণ্য ইসলামিক স্কলার, আল্লামা কামালুদ্দিন আব্দুল্লাহ জাফরী, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ আমীরুল হক শামীম, নরসিংদী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মোসলেহুদ্দীন, বি-বাড়িয়া জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোবারক হোসাইন।
হাফেজ মাহমুদুল হাসান আল মাদানী, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চরসীতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাফেজ মাওলানা তরীকুল্লাহ ছিলেন বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষানুরাগী। তিনি একাডেমিক ক্লাসের পাশাপাশি কুরআনুল কারীমের হিফয সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল (হাদীস) কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় মেধা তালিকায় যথাক্রমে- দ্বিতীয়, প্রথম, প্রথম ও চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। ১৯৭৯ সালে সৌদি সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মদিনা মোনাওয়ারায় ভর্তি হন এবং ‘তাফসীর ও উলুমুল কুরআন’ বিভাগ থেকে লিসান্স (অনার্স) ও মাস্টার্স-এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৮৮ সালে দেশে ফিরে নরসিংদীর জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যাবধি একই মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সৌদি আরবের রিলিজিয়াস এটাচের অধীনে বাংলাদেশে ‘দাঈ’ হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠানমালায় আলোচক ও বিচারক হিসেবে অংশ নিতেন।
তাঁর রচিত ও অনূদিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- ‘কুরআন দিয়ে নিজের চিকিৎসা করুন’ (অনুবাদ), ‘হে আহলে সুন্নাহর অনুসারীগণ! সতর্কতা গ্রহণ করুন’ (অনুবাদ), ‘সহজ তাওহীদ’ (অনুবাদ), ‘হাফেযে কুরআনের গুণাবলি’, ‘সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা’, ‘ইবাদাতের নামে প্রচলিত কতিপয় বিদ‘আত’, ‘শিরকের ভয়াবহতা, বিদআত ও উহার মন্দ প্রভাবসমূহ’, ‘একশত দশটি ফযীলত ও সূরা কাহফের তাফসীর’ (অনুবাদ)।

ফরহাদ আলম, নরসিংদী (শিবপুর-রায়পুরা)