প্লট জালিয়াতির তিন মামলায় কে কত বছর কারাদণ্ড পেলেন
আলোচিত প্লট দুর্নীতির ছয়টি মামলার মধ্যে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলার রায় আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে শেখ হাসিনাকে তিন মামলায় সাত বছর করে মোট ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার রায়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাজার মেয়াদ আলাদাভাবে কার্যকর হবে। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় কারাদণ্ড
শেখ হাসিনাকে তার প্লট জালিয়াতির মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় তার এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদারকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড, রাজউকের সাবেক সদস্য (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) শফিউল হককে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) খুরশীদ আলম এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) নাসির উদ্দীনকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা, সাবেক উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) নায়েব আলী শরিফকে এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিনকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকারকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের কারাদণ্ড
জয়ের প্লট জালিয়াতির মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনাকে ৭ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ছয় বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদারকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, রাউজকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মুহাম্মদ খুরশীদ আলমকে এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাস কারাদণ্ড, রাউজকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাসকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড, রাউজকের সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড, রাউজকের সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড, রাজউকের সাবেক সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড ওন ৫ হাজার জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, রাউজকের উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকান জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, এস্টেট ও ভূমি-৩ এর পরিচালক কামরুল ইসলামকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড, রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের কারাদণ্ড
প্লট জালিয়াতির মামলায় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শেখ হাসিনাকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদারকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, রাউজকের সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, রাউজকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাসকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ের দুই মাসের কারাদণ্ড, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) নাসির উদ্দীনকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ের দুই মাসের কারাদণ্ড, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরীকে ছয় বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাফিজুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, উপ-পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-৩) হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) শেখ শাহিনুল ইসলামকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার জরিমানা এবং অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলামকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ সালাহ উদ্দিনের ছয় বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে এই রায় ঘোষণা করেন।
সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া সুধা সদনের তথ্য গোপন, রাজউকের নির্ধারিত ফরমে আবেদন না করা, হলফনামায় অসম্পূর্ণ তথ্য দাখিলের পরও অবিশ্বাস্য দ্রুততায় রাজধানীর নতুন শহর পূর্বাচলের ডিপ্লোমেটিক জোনে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং বোন শেখ রেহানা সিদ্দিক, বোনের দুই সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিকের নামেও বাগিয়ে নেন আরও ৫০ কাঠার প্লট। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে একাধিকবার ‘রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নাই….’ বললেও রাষ্ট্রের লক্ষ কোটি টাকা অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হাসিনা পরিবার পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লটের লোভও সামলাতে পারেননি। এই দুর্নীতিতে শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক।
চলতি বছরের ১০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে প্লট দুর্নীতি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। তাতে এসব তথ্য উঠে আসে।
শেখ রেহানা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অপর তিনটি মামলায় রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য হয়েছে আগামী সোমবার (১ ডিসেম্বর)। প্লট বরাদ্দ পাওয়া এই ছয়জন ছাড়াও মোট ৪৭ জনকে এই ছয়টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। রাজউকের কর্মকর্তা খুরশীদ আলম ছাড়া বাকি সব আসামি বর্তমানে পলাতক আছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক