খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটময় : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আপনারা জানেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গতকাল রাতে (বৃহস্পতিবার) ডাক্তাররা বলেছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটময়।”
আজ শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বাদ জুমা নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিলের পরে বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘‘সেজন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রের নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তির জন্য জনগণের কাছে জুমায় সারা দেশে মসজিদে মসজিদে দোয়া চেয়েছিলাম এবং সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ নয়াপল্টনে মসজিদে নামাজ আদায় করে আমরা সবাই দেশনেত্রীর রোগ মুক্তির জন্য পরম করুণাময় আল্লাহতালার কাছে দোয়া চেয়েছি। ‘আমরা দোয়া চেয়েছি আল্লাহতালার কাছে তিনি যেন ম্যাডামকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দেন। সুস্থ অবস্থায় আবার জনগণের মাঝে ফিরিয়ে এসে দেশের মানুষের কাজ করার সুযোগ করে দেন। আমরা আবারও দেশের মানুষের কাছে তার রোগমুক্তির জন্য দোয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই ম্যাডামের জন্য দোয়া করবেন।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘দেশনেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন, কারাভোগ করেছেন। সবশেষে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন।”
এর আগে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনেও বিএনপি মহাসচিব দলের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।
এসময় বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘ম্যাডাম অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে আছেন। গতকাল রাতে আমি প্রায় দুইটার সময়ে ফিরেছি হাসপাতাল থেকে। তখনও ডাক্তাররা চেষ্টা করছিলেন। আমি অনুরোধ করব আপনারা ম্যাডামের আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া করবেন, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে দোয়া করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
এদিকে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্থতায় রাজধানীসহ সারা দেশে মসজিদে মসজিদে বাদ জুমা দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে এয়ারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন বেগম খালেদা জিয়া। রাতেই মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী জানান, খালেদা জিয়ার ফুসফুসে (চেষ্টে) ইনফেকশন হয়েছে। কেবিনে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে উনার চিকিৎসা চলছে।
এসময় রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি থেকে সাংবাদিকদের বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করলে সমস্যার সমাধান হয় না। গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদ অর্থাৎ শেখ হাসিনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণমাধ্যমের এই জায়গাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করব সেই জায়গা থেকে আপনারা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন।”
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সারাদেশের ১৮টি অঙ্গ ও ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। বিকেলে রয়েছে কর্ম অধিবেশন; যেখানে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা জানেন যে এমন একটা সময় এখন… যে সময়টার জন্য গোটা জাতি অপেক্ষা করে আছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা ফিরে যেতে সক্ষম হবো। আমরা সবাই এটা (নির্বাচন) চাই। একই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চাইলে অপরের যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেটাকে একই সঙ্গে মূল্য দিতে হবে। মূল জায়গায় ঐক্য থাকবে কিন্তু ভিন্নতা তো থাকবে। গণতন্ত্রের মূল কথা এই জায়গায় যে, আমি আপনার সঙ্গে একমত হবো না কিন্তু আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করব।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাকে শত্রু মনে করা হয়। তার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়। এই বিষয়গুলো থেকে আমার মনে হয় আমাদের সকলেরই একটু বিরত থাকা উচিত। আজকে তো সবচেয়ে বড় যে ক্রাইসিসটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেহেতু কোন দায়বদ্ধতা নেই, যা খুশি তাই বলা যায়। এমনভাবে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ীদের সকলের সম্পর্কে যে নেগেটিভ প্রচারণা চালানো হয়; তাতে করে কিন্তু গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না। মব ভায়োলেন্স তৈরি করা হচ্ছে, মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা হচ্ছে। একজন মানুষকে ভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে আমাদের গণতান্ত্রিক যে যাত্রা; সেই যাত্রায় কিন্তু আমরা বাধাগ্রস্ত হচ্ছি।”

নিজস্ব প্রতিবেদক