সমুদ্রে অবৈধ আহরণে মাছের সংস্থান কমে যাচ্ছে : মৎস্য উপদেষ্টা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সমুদ্রের মাছের সংস্থান প্রকৃতির অমূল্য দান হলেও অতি আহরণ, অবৈধ ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ এবং ক্ষতিকর জালের ব্যবহারের কারণে সামুদ্রিক মাছের সংস্থান কমে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সমুদ্র জরিপের ফলাফল বাংলাদেশকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার টেকসই অগ্রগতির জন্য জরিপের ফলাফল ও করণীয় বিষয়ক ব্রিফিংয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাছ ধরার কারণে জরিপে দেখা গেছে— সামগ্রিকভাবে মাছের স্টক কমছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ২৭৩টি শিল্প ট্রলারের মধ্যে ৭২টি ট্রলার সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তবে, সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না করায় অনাকাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা ও অপচয় বাড়ছে।
ফরিদা আখতার বলেন, সমুদ্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উচ্চ ঘনত্ব এবং জেলিফিশের অস্বাভাবিক বিস্তার— এই সতর্ক সংকেতগুলো স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, আমাদের সামুদ্রিক পরিবেশ গুরুতর ঝুঁকির মুখে।
মৎস্য উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, সাগর আমাদের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু, আমাদেরই অব্যবস্থাপনা তার ক্ষতি ডেকে আনছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের প্রাপ্য সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে।
এ সময় ফরিদা আখতার ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রলারের লাইসেন্স প্রদান কঠোরভাবে সীমিত করা এবং ট্রলারভিত্তিক মৎস্য আহরণের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার তাগিদ দেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সরকার সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডার, গবেষক, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সমন্বিত বৈঠক করা হবে। আমরা শুধু প্রতিবেদন গ্রহণ করে বসে থাকব না, দ্রুত করণীয় ঠিক করতে হবে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিয়ে আমাদের যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়নে বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা অপরিহার্য।
নরওয়ে সরকার ও এফএও-কে ২০২৭/২০২৮ সালের পর সমুদ্র জরিপে সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান মৎস্য উপদেষ্টা। পাশাপাশি বাংলাদেশের নিজস্ব গবেষণা জাহাজ প্রাপ্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। তিনি বলেন, নরওয়ে সরকার ও এফএওয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতা ও আধুনিক জরিপ পদ্ধতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সচিব বলেন, ২০১৮ সালের ড. ফ্রিডজফ ন্যানসেন জরিপ বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক ছিল। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের পর আমাদের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের প্রথম আধুনিক ও ইকোসিস্টেমভিত্তিক মূল্যায়ন সে জরিপই প্রদান করে, যা ভবিষ্যৎ গবেষণা ও ব্যবস্থাপনার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
আবু তাহের আরও বলেন, উন্মুক্ত আলোচনায় দেওয়া সব সুপারিশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশগত অবস্থা এবং আধুনিক মাছের মজুত নিরূপণে বিশ্বখ্যাত গবেষণা জাহাজ আর. ভি. ড. ফ্রিডজফ ন্যানসেনের সাম্প্রতিক জরিপের প্রাথমিক ফলাফল রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ২১ আগস্ট থেকে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ জরিপটি ছিল ২০১৮ সালের পর বাংলাদেশে পরিচালিত দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ মেরিন ইকোসিস্টেম জরিপ।
গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রয়্যাল নরওয়েজিয়ানের রাষ্ট্রদূত হোকন আরাল্ড গুলব্রান্ডসেন, বাংলাদেশে এফএও প্রতিনিধি ড. জিয়াওকুন শি।
গবেষণা জাহাজ আর. ভি. ড. ফ্রিডজফ ন্যানসেন (ডিএফএন) মিশন বিষয়ক প্রযুক্তিগত ব্রিফিং করেন নরওয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন রিসার্চের বিভাগীয় প্রধান এবং জরিপর ক্রুজ লিডার ড. এরিক ওলসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের প্রফেসর এবং টিম লিডার সাইদুর রহমান চৌধুরী, মৎস্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এবং সহ-ক্রুজ লিডার ড. মো. আবদুল্লাহ আল-মামুন। এফএও বাংলাদেশের জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়কারী এবং ডিএফএন জরিপ ২০২৫-এর ফোকাল পয়েন্ট ড. মো. আবুল হাসানাত এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
এ সময় সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, স্টেকহোল্ডার-সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)