এক মঞ্চে সাত ভিন্ন গল্পে অসীম সম্ভাবনা
বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার মঞ্চ টেডএক্স, যেখানে ‘আইডিয়াস ওর্থ স্প্রেডিং’ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে একত্রিত হয় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, ভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং বৈচিত্র্যময় গল্প। সেই ধারাবাহিকতায় এবার রাজধানীর বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি)-এ আয়োজিত হতে যাচ্ছে ‘টেডএক্স উত্তরা ২০২৫’।
‘পাওয়ার অফ পসিবিলিটি’ এই প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এই ইভেন্টে উঠে আসবে এমন কিছু অনন্য মানুষের পথচলা আর দৃষ্টিভঙ্গি, যারা তাদের নিজস্ব জগৎ থেকে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিতে কাজ করে চলেছেন। তন্মধ্যে তুলে ধরা হলো সাতটি ভিন্ন গল্প।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সবার গল্পের সম্মিলনে যেন সাহস, উদ্যোগ, সৃজনশীলতা, প্রযুক্তি ও মানবিকতার এক বিস্তৃত মানচিত্র তৈরি হবে।
আব্দুন নূর তুষার– বিতর্ক ও গণমাধ্যম জগতের এক অনন্য নাম
বাংলাদেশের বিতর্ক জগতের গুনীজন আব্দুন নূর তুষার, যিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করলেও বিতর্ক ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন। ২০১০ সালে আইআইটি বোম্বে আন্তর্জাতিক বিতর্কে সেরা বক্তা ও ইউনাইটেড এশিয়ানস ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় সেরা বক্তা নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় জাতীয় বিতর্ক সংগঠন বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন গড়ে তুলেছেন। টেলিভিশনে শিশুদের জন্য কুইজ ও বিতর্ক অনুষ্ঠান, জাতীয় অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা ও নিয়মিত লেখালেখি, সবই তাকে তরুণদের অনুপ্রেরণার এক নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরে। টেডএক্সের মঞ্চে তিনি শোনাবেন কীভাবে নেতৃত্ব সাহস ও উদ্ভাবনার সংমিশ্রণে তৈরি হয়।
অমিতাভ রেজা চৌধুরী– চলচ্চিত্র ও ওটিটি-এর মহারথী
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন জগতের অন্যতম প্রভাবশালী নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, যার পরিচালনায় নির্মিত ‘আয়নাবাজি’ ৭টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছে। রিকশা গার্ল (২০২১) আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি ‘হাফ স্টপ ডাউন’ প্রোডাকশন হাউসের প্রতিষ্ঠাতা এবং দেশের প্রথম উল্লেখযোগ্য ওয়েব সিরিজ ঢাকা মেট্রো পরিচালনার মাধ্যমে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এবারের টেডএক্স মঞ্চে তিনি বলবেন কীভাবে সিনেমা সংস্কৃতি ও সমাজকে রূপ দেয়।
অমিতাভ মিত্র– ব্র্যান্ডিং ও শিক্ষার সংযোগকারী
বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিংয়ের বিশাল অভিজ্ঞতা নিয়ে অমিতাভ মিত্র শিক্ষাবিদ হিসেবে তরুণদের পথপ্রদর্শক। মুম্বাইয়ের লিন্টাসে সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজের পাশাপাশি তিনি ভারতীয় সরকারি ক্যাম্পেইন ও বড় ব্র্যান্ডের কাজ পরিচালনা করেছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিস্টেমস অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক। এবারের টেডএক্স মঞ্চে তিনি দেখাবেন কীভাবে জ্ঞান ও কৌশল সম্ভাবনার নতুন দিক উন্মোচন করে।
ড. আহমেদ আরমান সিদ্দিকি– প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের পথপ্রদর্শক
ড. আরমান সিদ্দিকি বাংলাদেশের ডিজিটাল ও টেলিযোগাযোগ খাতের একজন পথপ্রদর্শক। তিনি মহসিন ফাতেমা সিদ্দিকি ইয়ুথ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং গ্রামীণ হেলথ টেক-এর সিইও হিসেবে দেশের প্রথম ডিজিটাল সেবা, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল প্ল্যাটফর্ম (বিকাশ, রকেট, নগদ) ও ওটিটি উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবারের টেডএক্স মঞ্চে তিনি জানাবেন কীভাবে প্রযুক্তি সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
রাশেদ মাইমুনুল ইসলাম– উদ্ভাবনী নেতৃত্বের প্রতীক
মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাশেদ মাইমুনুল ইসলাম বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পে তরুণ ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের প্রতীক। ১৬ বছরের কর্পোরেট অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি সিরামিকসকে ‘বেস্ট সিরামিক ট্যাবলেয়ার ব্র্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন ও তিনি যুব উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে পরিচিত। এবারের টেডএক্স মঞ্চে তিনি দেখাবেন কীভাবে নেতৃত্ব শিল্প ও উদ্ভাবনকে সম্মিলন করে।
বাদল সৈয়দ– সরকারি কর্মকর্তা ও সমাজসেবী
সরকারি দায়িত্বে থাকা বাদল সৈয়দ সমাজসেবার ক্ষেত্রেও রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ‘পে ইট ফরওয়ার্ড’ ও ‘মার্চ ফরওয়ার্ড’ প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তা করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্ট অফ দ্য ট্যাক্সেস অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সর্বোচ্চ গ্রেডের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তার নেতৃত্ব তরুণ সমাজে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও উদ্ভাবনী ভাবনার উদাহরণ হিসেবে কাজ করছে। এবারের টেডএক্স মঞ্চে তিনি দেখাবেন কীভাবে নেতৃত্ব ও মানবিকতা সমাজে প্রভাব ফেলে।
ফাতিহা আয়াত– শিশু অধিকার ও জলবায়ু ন্যায়ের কণ্ঠ
ফাতিহা আয়াত শিশু অধিকার ও জলবায়ু ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি জাতিসংঘের ইকোসক চেম্বারে বক্তৃতা দেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ-৭৪, হার্ভার্ড, ইউনিসেফ সম্মেলন ও টেডএক্স মঞ্চে তাঁর বক্তৃতা শিশু অধিকার ও পরিবেশ সচেতনতার উদাহরণ। তিনি চাইল্ড-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এবং লেটস ডু ইট ওয়ার্ল্ড -এর ইয়ুথ অ্যাম্বাসেডর। এবারের টেডএক্স মঞ্চে তিনি শোনাবেন কীভাবে তরুণ শক্তি সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হতে পারে।
সম্ভাবনার এই মঞ্চে আরও যারা পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন তারা হলেন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ড. স্কট ল্যাকম্যান, প্রযুক্তি শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, রাঁধুনি ও সাংস্কৃতিক উদ্যোক্তা কিশোয়ার চৌধুরী, শিল্পী ও সমাজ পরিবর্তক মোরশেদ মিশু, কৃষি উদ্যোক্তা সাকিব হোসাইন, সঙ্গীতশিল্পী আইয়া লেমনস্কাই, আইনজীবী ও সমাজকর্মী মানজুর আল মতিন।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক