দেশে প্রথমবারের মতো স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি বিপণন ডিপোর কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মগবাড়ি চৌমুহনীতে স্থাপিত এই ডিপোটি আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে ডিপোটির উদ্বোধন করেন বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল ইসলাম খান, বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) ড. এ কে এম আজাদুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ শ্যামল ও জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল হাসান।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পদ্মা অয়েল কোম্পানির প্রকল্প পরিচালক আমিনুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন পদ্মা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান।

বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, ‘এটি কুমিল্লাবাসী ও বাংলাদেশের জন্য একটি আনন্দের দিন। আজ কুমিল্লায় দেশের প্রথম সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি ডিপো চালু হলো। আগে ট্যাংকিতে তেল ভরা হতো, যেখানে কম-বেশির ঝুঁকি থাকত। কিন্তু এই ডিপোতে পুরো প্রক্রিয়াই হবে স্বয়ংক্রিয়। গাড়ি ঢুকবে, কার্ড পাঞ্চ করা হবে এবং কোনো মানবিক সহায়তা ছাড়াই জ্বালানি তেল সরবরাহ সম্পন্ন হবে।’

বিপিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝামাঝি স্থানে ডিপোটি হওয়ায় যাতায়াত ব্যয়ও সময় সাশ্রয় হবে। প্রতিদিন এখানে ১০০ থেকে ১৫০টি ট্রাক আসবে, এতে স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং এ অঞ্চলের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই ডিপো।

দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় পেট্রোলিয়াম ডিপো স্থাপনকে জ্বালানি খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় ডিলার ও ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলার ব্যবসায়ীরা এ ডিপো থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে পরিবহণ ব্যয় কমবে এবং জ্বালানি সংগ্রহ আরও সহজ হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডিলার তাজুল ইসলাম ও কামাল হাসান বলেন, এই ডিপো কুমিল্লা অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এখন আর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে চাঁদপুর কিংবা চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল আনতে হবে না। সড়ক সমস্যার কারণে জ্বালানি সংগ্রহেও আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন যমুনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহীরুল হাসান।

‘চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিপোটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে জ্বালানি গ্রহণ থেকে বিতরণ পর্যন্ত সব কার্যক্রম প্রযুক্তিনির্ভর ও মানবস্পর্শহীনভাবে পরিচালিত হবে, যা দেশের পেট্রলিয়াম জ্বালানি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এই ডিপো থেকে বিপিসির তিনটি বিপণন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান—পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল পিএলসি—আলাদাভাবে তাদের ডিলার ও ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে ডিজেল, পেট্রল ও অকটেন সরবরাহ করবে। পুরো ডিপোটির তত্ত্বাবধানে থাকবে পদ্মা অয়েল পিএলসি।  

চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরাসরি এই ডিপোতে আসবে। এখান থেকে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় জ্বালানি সরবরাহ করা হবে। এতে সরবরাহ সময় কমার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে এবং তেল চুরির মতো অভিযোগও অনেকাংশে কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বরুড়া উপজেলার মগবাড়িতে ডিপোটির অবস্থান। ১৬ দশমিক ১৬৪ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত এই ডিপোতে ১৯ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ডিজেল, এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পেট্রল এবং এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন অকটেন সংরক্ষণের সক্ষমতা রয়েছে।

পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল গ্রহণের ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরিবহণ ধর্মঘট কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো পরিস্থিতিতেও জ্বালানি গ্রহণ, মজুদ ও বিতরণ কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হবে। কুমিল্লা অঞ্চলের ফিলিং স্টেশনগুলোকে আগে চাঁদপুর বা ফতুল্লা-গোদনাইল থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হতো। নতুন ডিপো স্থাপনের ফলে যানজট, পরিবহণ খরচ, সময় ও শ্রম—সবকিছুই উল্লেখযোগ্যভাবে সাশ্রয় হবে।