মরা মুরগি নিয়ে থানায় গৃহবধূ, মামলা দায়ের
১৮টি মুরগি সংখ্যায় কম মনে হতে পারে, কিন্তু একটি দরিদ্র সংসারের কাছে এগুলোই ছিল স্বপ্ন আর আয়ের ভরসা। সেই স্বপ্নেই ঢেলে দেওয়া হয়েছে বিষ। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় দুই গৃহবধূর ১৮টি মুরগি বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গৃহবধূ শাপলা বেগম মৃত মুরগিগুলো থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি এখন প্রাণিসম্পদ দপ্তর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কটকবাড়ি গ্রামে ভোরের আলো উঠোন ছুঁতেই থমকে যান গৃহবধূ শাপলা বেগম ও কানিজ ফাতেমা। তারা দেখেন, তাদের পরম যত্নে পালিত মুরগিগুলো ছটফট করছে। চোখের সামনেই একে একে নিভে যায় প্রাণ। গত ১৩ ডিসেম্বর কিছু বোঝার আগেই চারটি মুরগি নিথর হয়ে পড়ে। এরপর একে একে ঝরে যায় আরও ১৪টি মুরগির ছানার প্রাণ। উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক অসহায় নীরবতা। এ ঘটনায় সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বিকেলে থানায় মামলা দায়ের করেছেন গৃহবধূ শাপলা বেগম।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এই মুরগিগুলোই ছিল তাদের সংসারের আয়ের অন্যতম ভরসা। মুরগি ও ডিম বিক্রি করেই চলত নিত্যদিনের খরচ। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী আনিছুর রহমানের সাথে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে উঠোনে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
ভুক্তভোগী শাপলা বেগম বলেন, এক মুহূর্তে সব শেষ হয়ে গেল। মানুষের সঙ্গে মানুষের শত্রুতা থাকতে পারে, কিন্তু এই অবলা মুরগিগুলো কী অপরাধ করেছিল? আমার স্বামী একজন কৃষক। আমি হাঁস-মুরগি ও ছাগল পালন করে সংসারে সহায়তা করি। আমি এই নিষ্ঠুর কাজের বিচার চাই।
শাপলার জা কানিজ ফাতেমা অভিযোগ করে বলেন, আমার ও শাপলার মিলে প্রায় ১৮টি মুরগি বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছে প্রতিবেশী আনিছুর। তার সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু তাই বলে বাড়ির উঠোনে বিষ ছিটিয়ে মুরগি মেরে ফেলবে? আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
অভিযুক্ত আনিছুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে ফাঁসানোর জন্য মুরগিগুলো মেরে ফেলে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
ন্যায়বিচারের আশায় ঘটনাটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর পর্যন্ত জানানো হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিপা রানী জানান, মৃত মুরগিগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সার্বিক বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।

মিঠু হাসান, নওগাঁ (বদলগাছী-মহাদেবপুর)