শরিফ ওসমান হাদির জীবন ও পরিচয়
দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি। ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শরিফ ওসমান হাদি ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক, যার আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষা হাদির জীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠতম।
ওসমান হাদির শিক্ষা জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঝালকাঠির বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স মাস্টাস করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করার পর হাদি জ্ঞান বিতরণের মহান পেশা শিক্ষকতাকে বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
শরিফ ওসমান হাদি এক সন্তানের জনক। পরিবার, শিক্ষকতা ও জ্ঞানচর্চাকে ঘিরেই বর্তমানে তার প্রাত্যহিক জীবন আবর্তিত হতো।
২০২৪ এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শরিফ ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়—সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
গত নভেম্বর মাসে নিজের ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক পোস্টে হাদি জানান, দেশি–বিদেশি অন্তৃত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাকে ফোন ও মেসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তার বাড়িতে আগুন দেওয়া এবং মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয় বলে তিনি লেখেন।
ওই পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকরা তাকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে। ‘জীবননাশের আশঙ্কা’ সত্ত্বেও তিনি ‘ইনসাফের লড়াই’ থেকে পিছিয়ে যাবেন না বলেও মন্তব্য করেন।
গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ওই রাতেই সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক