হাদির মৃত্যুতে সারা দেশে বিশেষ দোয়া ও কফিন মিছিল আজ
জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর সারা দেশের সকল মসজিদে বিশেষ দোয়া এবং কফিন মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জুলাই ঐক্য’ এ ক্ররমসূচি ঘোষণা করেছে।
জুলাই ঐক্যের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শহীদ ওসমান বিন হাদি আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানের অস্তিত্ব। তার প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা বাংলাদেশের মাটিতে নেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ। একইসঙ্গে দেশের সব বিপ্লবী জনতাকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ওই রাতেই সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে গত ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। ছয়দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় দেশে পৌঁছাবে। আগামীকাল শনিবার তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হবে বলে জানায় ইনকিলাব মঞ্চ।
ওসমান হাদির মৃত্যুতে গভীর শোক ও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার মৃত্যুতে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করেছে। ওসমান হাদির হত্যাকারী ও নির্দেশদাতাকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে দলগুলো।
শরিফ ওসমান হাদি ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক, যার আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষা হাদির জীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠতম।
ওসমান হাদির শিক্ষা জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঝালকাঠির বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স মাস্টাস করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করার পর হাদি জ্ঞান বিতরণের মহান পেশা শিক্ষকতাকে বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
শরিফ ওসমান হাদি এক সন্তানের জনক। পরিবার, শিক্ষকতা ও জ্ঞানচর্চাকে ঘিরেই বর্তমানে তার প্রাত্যহিক জীবন আবর্তিত হতো।

নিজস্ব প্রতিবেদক