হাদি হত্যার বিচারসহ ৩ দফা দাবি ঘোষণা ইনকিলাব মঞ্চের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করতে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তা নেওয়ার আহ্বানও জানায় তারা।
আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।
সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘ওসমান হাদির হত্যাকারী কারা সেটা না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিয়ে চলে যাবেন এটা হবে না। নির্বাচনের আগে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, এর আগে কোনো নির্বাচন হবে না।’
স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টারা দায়িত্বে অবহেলা করছে অভিযোগ করে আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘ইনকিলাব মঞ্চ এখন থেকে পুরো সময় রাজপথে থাকবে। খুনিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছাড়বে না। খুনি ও খুনিদের মদতদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এ সময় তিন দফা দাবি ঘোষণা করে ইনকিলাব মঞ্চ। দাবিগুলো হলো—
১. দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করা। তদন্তের জন্য এফবিআই অথবা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো পেশাদারি এবং নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সংস্থাকে যুক্ত করা।
২. সিভিল-মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা।
৩. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী এবং আইন উপদেষ্টাকে জনগণের কাছে তাদের অপারগতার কারণ প্রকাশ করে এই খুনের সকল দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় বন্দুকধারীরা শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ওই রাতেই সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত ২০ ডিসেম্বর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলের পাশে সমাহিত করা হয়।
শরিফ ওসমান হাদি ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক, যার আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষা হাদির জীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠতম।
ওসমান হাদির শিক্ষা জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঝালকাঠির বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স মাস্টাস করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করার পর হাদি জ্ঞান বিতরণের মহান পেশা শিক্ষকতাকে বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
শরিফ ওসমান হাদি এক সন্তানের জনক। পরিবার, শিক্ষকতা ও জ্ঞানচর্চাকে ঘিরেই তার প্রাত্যহিক জীবন আবর্তিত হতো।

নিজস্ব প্রতিবেদক