মাঠেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আগাম আলু
রংপুরসহ উত্তরের পাঁচ জেলা- লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে গত বছরের লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবারও আগাম আলুর আবাদ করেছেন কৃষকরা। নানা অনিশ্চয়তা থাকলেও ফলন ঘরে তোলার পর এখন কৃষকদের চোখে-মুখে স্বস্তির হাসি। বেশির ভাগ ক্ষেতের আলু মাঠ থেকেই সরাসরি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এবং দামও মিলছে সন্তোষজনক।
রংপুরে ইতোমধ্যে আগাম জাতের আলু তোলা শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই পাইকাররা খেত থেকে মানভেদে কেজি প্রতি ৪৯ থেকে ৫২ টাকা দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও গত বছর এই সময়ে পাইকারি বাজারে নতুন আলুর দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। কৃষকদের দাবি, বীজের দাম গতবারের চেয়ে কম হলেও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ফলন কিছুটা কম হয়েছে। ফলে লাভের পরিমাণ খুব একটা বেশি না হলেও তারা বড় ধরনের লোকসানে পড়ছেন না।
কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ৯ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪০০ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। আগাম আলুর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে, যার মধ্যে ৮০০ হেক্টর জমির আলু ইতোমধ্যে তোলা শেষ হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার নোহালী ও আলমবিদতর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকালের কুয়াশা ভেদ করে নারী শ্রমিকরা আলু তোলায় ব্যস্ত। কেউ মাটি খুঁড়ছেন, কেউবা আলু কুড়িয়ে ডালায় রাখছেন। পাশেই ডিজিটাল মিটারে ওজন মেপে ব্যবসায়ীরা নগদ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে আলু বুঝে নিচ্ছেন। আগাম আলু তোলার পর ওই জমিতেই এখন ভুট্টা বা তামাক রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন চাষিরা।
তুলশীরহাট এলাকার কৃষক মহব্বত আলী জানান, তিনি ৫৫ শতক জমিতে আগাম আলু চাষ করেছিলেন। পাইকার এসে খেত থেকেই ৫০ টাকা দরে সব আলু কিনে নিয়েছেন।
আলু ব্যবসায়ী শ্যামল চন্দ্র সরকার জানান, ৫২ টাকা কেজি দরে ‘ক্যারেজ’ জাতের আলু কিনে তারা সরাসরি ঢাকা পাঠাচ্ছেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখন আলুর সন্ধানে রংপুরের মাঠগুলোতে ভিড় করছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হোসেন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে কৃষকরা গতবারের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বিভাগের পাঁচটি জেলা থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির আগাম আলু উত্তোলন করা হয়েছে। ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের পাইকাররা সরাসরি জমি থেকে আলু কিনে নেওয়ায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)