বাকৃবি উন্নয়নের ৬৫৯ কোটি টাকা ফেরতের অভিযোগ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন হলসহ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের ৬৫৯ কোটি টাকার কাজ তিন বছরেও শেষ করতে না পারায়, উপাচার্যের ব্যর্থতায় সে অর্থ ফেরত যাওয়ার অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সরকার সমর্থক গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম।
আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক ক্যাফেটেরিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টুর বিরুদ্ধে ডিপিপি বাস্তায়নে ব্যর্থতা, অযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে প্রশাসন পরিচালনা, নিয়মিত অফিস না করা, এপিপি বাস্তবায়নে পশ্চাদপদতাসহ আটটি বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের একটি অংশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. পূর্বা ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন সভাপতি প্রফেসর ড. এম এ এম ইয়াহিয়া খন্দকার, প্রফেসর ড. মুঞ্জুরুল আলম চম্পক, প্রফেসর ড. এমদাদুল হক, প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান এবং বিভিন্ন অনুষদের প্রধানরা।
পূর্বা ইসলাম বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন অবিভক্ত ফোরামে আলোচনা করে কোনো ফল পাইনি। পরে আমাদের নিবৃত্ত করতে ভিসি মহোদয় ফোরামকেই দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেন। পরে গত বছর এপ্রিল মাসে আমরা আলাদা ফোরাম করে আন্দোলন করছি।’
ড. পূর্বা ইসলাম আরও বলেন, ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন হলসহ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দের ৬৫৯ কোটি টাকার কাজ তিন বছরেরও শেষ করতে না পারায় সে অর্থ ফেরত গেছে। অথচ শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয়দফার অর্থ বরাদ্দ পেয়ে কাজ শুরু করেছে। তিনি নিয়মিত ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকছেন। যে কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় অন্ধকারে নিপতিত হয়েছে।
ড. লুৎফুল হাসান মন্টু উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই অফিসে অনুপস্থিত থাকছেন। তাঁর অদক্ষতার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পেছনে রয়েছে।
উপাচার্যের জন্য বরাদ্দ বাসভবন ছাড়াও আগে ড. লুৎফুল হাসান মন্টু যে বাসায় আগে থাকতেন, সেটি এখনও অবৈধভাবে ব্যবহার করছেন।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাসা বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নজিরবিহীন অনিয়ম করে চলেছেন ড. লুৎফুল হাসান মন্টু। বিভিন্ন নিয়োগেও অনিয়ম করেছেন তিনি। বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়াই শিক্ষক বদলি, বাছাই কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করে নিয়োগদান এবং সেই নিয়োগপত্র গ্রহণ না করায় অন্য বিভাগে বদলি করছেন। এমন নজির বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ছিল না।
দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. রফিকুল হকের সহচরদের ড. লুৎফুল হাসান মন্টু তাঁর আশপাশে জায়গা দিয়েছেন। তিন বছর ধরে অনুপ্রবেশকারী স্বার্থান্বেসী নীতি নৈতিকতাহীন অযোগ্য অদক্ষ এসব লোকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় তার কাঙ্ক্ষিত গতি দীর্ঘ লালিত ঐতিহ্য বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। এ দায় উপাচার্যর বলে দাবি করেন ড. পুর্বা ইসলাম। দীর্ঘ ঐতিহ্যকে ছাপিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট জেঁকে বসেছে। সরকারি প্রজ্ঞাপন থাকা সত্ত্বেও স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের আজও কাম্পাসে আনা হয়নি। করোনার অজুহাতে তার নেতৃত্বে একাডেমিক কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে।
অবিভক্ত ফোরামেও আমরা এসব আলোচনা করেছি, কোনো কাজ হয়নি। বরং ফোরামের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল করতে বিভক্ত করেছেন। ভিসির এসব অনিয়মে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ড. পূর্বা ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি প্রফেসর ড. লুৎফুল হাসান মন্টু সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।