রাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু
দীর্ঘ ৩৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন শুরু হয়েছে। নানা আলোচনা ও উৎকণ্ঠা শেষে এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। কেবল ভোটার বা প্রার্থী নয়, পুরো রাজশাহীতেই বইছে নির্বাচনি আমেজ।
সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পুরো ক্যাম্পাসকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রে ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটার তাদের পছন্দের ৯১৮ জন প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, রাকসু নির্বাচনে এবার ১০টি প্যানেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। রাকসুর কেন্দ্রীয় ২৩টি পদের জন্য ৩০৫ জন, সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের পাঁচটি পদের জন্য ৫৮ জন এবং ১৭টি হল সংসদের প্রতিটিতে ১৫টি করে মোট ২৫৫টি পদের বিপরীতে ৫৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একজন ভোটারকে ৪৩টি পদে ভোট দিতে হবে, যার জন্য তিনি সময় পাবেন মাত্র ১০ মিনিট। সেই হিসেবে, প্রতিটি ভোট দেওয়ার জন্য একজন ভোটার গড়ে প্রায় ১৪ সেকেন্ড সময় পাবেন। কেন্দ্রীয় সংসদে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ১৮ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৩ জন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৬ জন প্রার্থী লড়ছেন। মোট ভোটারের মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন (৩৯.১ শতাংশ) এবং ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৫ জন (৬০.৯ শতাংশ)।
কেন্দ্রীয় সংসদে অন্যান্য পদের মধ্যে ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, সহকারী ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে ৬ জন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে ১০ জন, সহকারী সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক পদে ৯ জন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে ৬ জন, সহকারী মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক পদে ১৩ জন, সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৮ জন, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, সহকারী মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৯ জন, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৮ জন, বিতর্ক ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ৬ জন, সহকারী বিতর্ক ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ১২ জন, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ১৬ জন এবং নির্বাহী সদস্য পদে ৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাকসু, সিনেট ছাত্রপ্রতিনিধি ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, আজ ভোটের দিন দুই হাজার পুলিশ, ১২ প্লাটুন র্যাব, ছয় প্লাটুন বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি এবং স্কাউট সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তিনটি প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে।
গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্য তিন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত সমন্বয় হচ্ছে। হলগুলোতে যাতে কোনো বহিরাগত না থাকে বা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিন বছর পর ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়। তখন এর নাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। ১৯৬২ সালে এটি রাকসু নামে যাত্রা শুরু করে। এরপর এ পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে মাত্র ১৪ বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের রাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন রুহুল কবির রিজভী, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাকসুর ভিপি হিসেবে হায়দার আলী, নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, ফজলুর রহমান পটল, ফজলে হোসেন বাদশা, রাগিব আহসান মুন্না নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯০ সালের পর থেকে রাকসু নির্বাচন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের পর কিছু দাবি উঠলেও রাকসু শেষমেশ বাস্তবায়িত হয়নি।

আবু সাঈদ রনি, রাজশাহী (সদর-গোদাগাড়ী-পবা)