ইউপি চেয়ারম্যান থেকে সংসদ সদস্য হয়ে চমক দেখালেন সাইফুল
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৯ আসনে চমক দেখিয়েছেন স্বতন্ত্রপ্রার্থী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। ট্রাকে চড়ে নৌকাকে ডুবিয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, সাভারের ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক এই চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র লড়ে হারিয়েছেন বর্তমান ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানকে। যদিও তিনি ক্ষমতাসীন ও এই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে, তা থানা পর্যায়ে। এই আসনে তৃণমূলের কাছে হেভিওয়েট প্রার্থীর হার এখন তাই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
বেসরকারি ফলাফল বলছে, সর্বোচ্চ ৮৪ হাজার ৪১২ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী সাইফুল। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অপর স্বতন্ত্রপ্রার্থী (ঈগল) তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২০২ ভোট। অথচ বর্তমান সংসদ সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান পেয়েছেন ৫৬ হাজার ৩৬১ ভোট। সে হিসাবে ২৮ হাজার ৫১ ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রার্থীকে ধরাসায়ী করেছেন ট্রাক প্রতীকের এই স্বতন্ত্রপ্রার্থী।
স্থানীয়দের ধারণা, রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর যে ডা. এনামের উত্থান হয়, তা অনেকটাই এখন মলিন। এবারের নির্বাচনই তার প্রামাণ। এর পেছনে আছে নানা কারণ। তারপর আবার তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও এনাম-মুরাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা সাধারণ ভোটারের মধ্যে ফেলেছে নেতিবাচক প্রভাব। ডা. এনামকে ছেড়ে মুরাদ জং-এ যোগদান, নিজেদের মধ্যে বিরোধ, অন্যদিকে নির্বাচনি মাঠে সাইফুলের নিজস্ব কৌশল–সব মিলিয়ে এ দুজনকে ছাপিয়ে গেছেন সাইফুল।
ভোটের প্রচারে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী সাইফুল বলেছিলেন, সন্ত্রাসী-চাদাঁবাজদের ভোট তার লাগবে না। এতেও অনেক সাধারণ ভোটার আশ্বস্ত হন। তিনি এই কথা তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা শুরু হয়। তবে, তখন কেউই বুঝতে পারেনি, এতো ভোট ব্যবধানে জিতবেন তিনি। এমনকি, জিতবেন যে, তাও ভাবেননি অনেকেই। এটিও তার জেতার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে, তিনি জয়ী হলে শ্রমজীবী শ্রেণির আধিক্যের অঞ্চল সাভারের শ্রমিকদের নানা সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও তার বিজয়ের পথকে প্রশস্ত করেছে। তবে, অধিকাংশের ধারণা, এনাম-মুরাদের দ্বন্দ্বই এগিয়ে দিয়েছে সাইফুলকে।
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এনটিভি অনলাইনের এই প্রতিবেদকের প্রশ্নে অনুভূতি প্রকাশ করে জানান, প্রতিটি প্রার্থীর নির্বাচনি কৌশল ভিন্ন। আমি তৃণমূলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে বিগত অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছি। আমার প্রথম লক্ষ্যই ছিল সম্মানিত ভোটারদের সরাসরি আমার অভিপ্রায় পৌঁছে দেওয়া। আমি যেমন তাদের ভাষা বুঝেছি, তারাও বুঝেছে আমার ভাষা। আমি মনে করেছি, এই ভোটাররাই আমার শক্তি। আমার আশা ছিল—সুষ্ঠু অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ আমাকে বেছে নেবে। সে প্রত্যাশা থেকে আমি সব সময় সজাগ ছিলাম যেন নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হয়।
অপর এক প্রশ্নে মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সংসদে বিরোধী দলে যাবার প্রশ্নই উঠে না। আমি সরকারি দলের লোক সরকারি দলেই যোগ দেব।’