ইউরোভিশন : যুদ্ধের মধ্যেই অন্যরকম বিজয় ইউক্রেনের

Looks like you've blocked notifications!
জনপ্রিয় ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতায় জিতেছে ইউক্রেনের র‌্যাপ-ফোক ব্যান্ড ‘কালুশ অর্কেস্ট্রা’। ছবি : সংগৃহীত

ইউরোপের জনপ্রিয় ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতায় জিতেছে ইউক্রেনের র‌্যাপ-ফোক ব্যান্ড ‘কালুশ অর্কেস্ট্রা’। এ জয়কে রুশ আক্রমণে জর্জরিত দেশটির প্রতি জনসমর্থনের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর বিবিসির।

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার বিশেষ অনুমতি পেয়েছিল ‘কালুশ অর্কেস্ট্রা’। প্রতিযোগিতায় তারা ৬৩১ পয়েন্ট পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।

ইতালির তুরিনে নিজেদের পারফরম্যান্স শেষে ‘কালুশ অর্কেস্ট্রা’ আহ্বান জানায় : ‘দয়া করে ইউক্রেনকে সাহায্য করুন, মারিউপোলকে সাহায্য করুন, এখনই আজভস্টালকে সাহায্য করুন।’

‘কালুশ অর্কেস্ট্রা’ যে গানটি গেয়ে বিজয় নিশ্চিত করে, তার শিরোনাম—‘স্টেফানিয়া’। গানটি মূলত ব্যান্ডের মূল গায়ক ওলেহ সিউকের মায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা হয়েছিল। কিন্তু, সাম্প্রতিক রুশ আগ্রাসনের ঘটনায় ইউক্রেনের আর্তনাদ হিসেবে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে গানটি।

সমসাময়িক র‌্যাপ ও হিপ-হপের সঙ্গে পুরোনো ধাঁচের ইউক্রেনীয় লোকগীতি আর ঐতিহ্যবাহী বাঁশির সুরের অনন্য মিশেলে সুরারোপিত এই ‘স্টেফানিয়া’ গানটি। গানের কথায় উঠে এসেছে ইউক্রেনের ‘ভাঙা রাস্তা’ আর ‘ধূসর হয়ে যাওয়া’ খেতের কথা। এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেনবাসী বর্তমানে যে ধ্বংসলীলার মুখোমুখি, তা-ই যেন অদ্ভূতভাবে মিলে গেছে।

ব্যান্ডের দলনেতা সিউক গত সপ্তাহে বলছিলেন, ‘(রাশিয়ার আক্রমণের জেরে) যুদ্ধ আর শত্রুতা শুরু হওয়ার পর, গানটি অন্যমাত্রা পায়। অনেকেই গানটি হয়ে ওঠে দেশমাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। গানটি সত্যিই ইউক্রেনের অনেক মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি যেতে পেরেছে।’

জয়ের ট্রফি গ্রহণ করে সিউক দর্শক-শ্রোতার উদ্দেশে বলেন : ‘ইউক্রেনকে সমর্থন করায় আপনাদের ধন্যবাদ। এ জয় ইউক্রেনবাসীকে উৎসর্গ করা হলো।’

মূল মঞ্চের নেপথ্যে থেকে কথা বলার সময় এ গায়ক জানান, তিনি আশা করছেন—ইউক্রেন ২০২৩ সালে প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করতে পারবে।

সিউক বলেন, ‘আমি নিশ্চিত—আগামী বছর আমরা এক নতুন, ঐক্যবদ্ধ ও সুখী ইউক্রেনে খুশি মনে ইউরোপের আতিথেয়তা করতে পারব।’

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে এ বছরের প্রতিযোগিতা থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়। আয়োজকদের ভাষ্য ছিল—রাশিয়ার অংশগ্রহণ ‘প্রতিযোগিতাটিকে কলুষিত করতে পারে।’

ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েক জন শিল্পী। তাঁরা ইউক্রেনের পতাকা ওড়ান এবং মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বিবৃতিও দেন। নিজেদের পারফরম্যান্স শেষে আইসল্যান্ডের ‘সিস্টুর’ বলে—‘ইউক্রেনে শান্তি আসুক! আমরা তোমাদের ভালোবাসি!’

এস্তোনিয়ার গায়ক স্টেফান প্রতিযোগিতায় ‘হোপ’ (আশা) শিরোনামের দেশীয় গীতিনাট্যের শেষে ইউক্রেনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা একটি ভালো আগামীর আশা হারাবেন না।’

সারা বিশ্বে ঐক্যের বার্তা দিয়ে প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জন লেননের বিখ্যাত গান ‘গিভ পিস এ চান্স’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তুরিনের রাস্তায় এক হাজার সংগীতশিল্পী গানটি পরিবেশন করেন।

কিন্তু, ইউক্রেনের জয়ের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে, তা হলো—আগামী বছরের ইউরোভিশন অনুষ্ঠানের আয়োজক কে হবে?

কেননা, প্রতিযোগিতার রীতি অনুযায়ী—সর্বশেষ বিজয়ী দেশটিই সাধারণত পরের বছরের আয়োজক হয়। কিন্তু, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ-বাস্তবতায় সে সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে নিয়ম হলো—যখন কোনো দেশ প্রতিযোগিতার আয়োজক হতে অনিচ্ছুক বা অক্ষম হয়, তখন অন্য কোনো দেশকে সুযোগ দেওয়া হয়। এমন ঘটনার সর্বশেষ উদাহরণ অবশ্য অনেক বছর আগের। ইসরায়েল টানা দুবছর বিজয়ী হওয়ার পর প্রতিযোগিতাটির আয়োজক হতে অস্বীকৃতি জানালে, ১৯৮০ সালে নেদারল্যান্ডস আয়োজকের দায়িত্ব নেয়।

তবে, গতকাল শনিবার রাতে দেওয়া বিবৃতিতে প্রতিযোগিতার মূল আয়োজক ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইউইবিইউ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালের আয়োজক দেশ কে হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

তবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অঙ্গীকার করেছেন, যদি সম্ভব হয়, তাহলে তিনি প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করবেন : ‘আমরা এক দিন ইউক্রেনের মারিউপোলে ইউরোভিশনের প্রতিযোগী ও অতিথিদের আতিথেয়তা দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। (সেটি হবে) মুক্ত, শান্তিপূর্ণ, পুনর্গঠিত (ইউক্রেনে)!’