১১ বার হজে গিয়েছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান
বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান ব্যক্তিজীবনে বেশ ধার্মিক ছিলেন। এই অভিনেতা ১১ বার হজে গিয়েছিলেন।
২০১৯ সালে নিজের জন্মদিনে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মেয়ের বাসায় এক ঘরোয়া আয়োজনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন এই অভিনেতা। সেই আয়োজনে, সুস্থ হয়ে উঠলে আরও একবার হজে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ইচ্ছে তাঁর পূরণ হয়নি।
এ ছাড়া এ টি এম শামসুজ্জামান রাজধানীর পুরান ঢাকার নারিন্দার পীর সাহেবের মুরিদ ছিলেন বলে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই সালেহ জামান সেলিম। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, এ টি এম শামসুজ্জামান তাঁর শেষ ইচ্ছায় জানিয়েছিলেন, তাঁর যেন একাধিক জানাজা না হয়। নারিন্দার পীর সাহেব যেন তাঁর জানাজা পড়ান।
আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে নিজ বাসায় মারা যান এ টি এম শামসুজ্জামান (৮০)। অভিনেতার ছোট ভাই সালেহ জামান সেলিম এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, তাঁর মরদেহ নারিন্দার পীর সাহেব বাড়ি মাজারে নেওয়া হবে। বাদ জোহর পুরান ঢাকার সূত্রাপুর জামে মসজিদে তাঁর জানাজা হবে। তারপর রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানকে দাফন করা হবে এ টি এম শামসুজ্জামানকে। এর আগে শারীরিক জটিলতা নিয়ে বিভিন্ন সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জনপ্রিয় এ অভিনেতা।
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান ছিলেন একাধারে পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। অভিনয়ের জন্য একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক।
এ টি এম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন পুরান ঢাকার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পোগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্রজীবনের শুরু ১৯৬১ সালে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ওই চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক। শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান।
প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৯ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার গ্রহণ করেন।