অভিনয়ের প্রমাণ দিয়েছি ‘রানা প্লাজা’য় : পরীমনি
‘রানা প্লাজা শুধু একটি ছবি নয়, এটা আমার স্বপ্ন। অনেক কষ্ট, অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ছবিতে। এই ছবি করতে গিয়ে আমি রেশমার মতো হাজারো মানুষের আর্তনাত শুনেছি। আর সবচেয়ে বড় কথা, আমি এই নিজেকে নায়িকা নয়, একজন অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছি’- ‘রানা প্লাজা’ ছবি নিয়ে এভাবেই নিজের আবেগের কথা বলছিলেন নায়িকা পরীমনি।
‘রানা প্লাজা’ ছবিতে পোশাক শ্রমিক ‘রেশমা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন সায়মন। সায়মনের চরিত্রের নাম টিটু। পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমার কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন নজরুল ইসলাম খান।
গত ১১ জুন ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পাওয়ার পর এখন মুক্তির অপেক্ষায়। আগামী ১৮ জুন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ছবির মুক্তির দিন সম্পর্কে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিচালক নজরুল ইসলাম খান। ছবিটি প্রযোজনা করেছে এএম মাল্টিমিডিয়া। এটিই তাদের প্রযোজিত প্রথম ছবি।
ছবিতে দেখা যাবে, গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রেশমা। তাঁকে ভালোবাসে প্রতিবেশী যুবক টিটু। কিন্তু টিটু তাদের চেয়ে অবস্থাপন্ন বলে তার প্রস্তাবে সায় দিতে চায় না রেশমা। টিটুও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। এক দুর্ঘটনায় টিটু রেশমাকে উদ্ধার করে। তখন রেশমা সাড়া দেয় তার প্রস্তাবে।
এর কিছুদিন পর বিয়ে করে টিটু ও রেশমা। তারা ঢাকায় চলে আসে। তখন এক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে টিটু। পরিবারের দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়ে রেশমা যোগ দেয় এক পোশাক কারখানায়। রেশমার চাকরিতে যোগদানের ব্যাপারটি সহজে মেনে নিতে পারে না পুরুষশাসিত সমাজ। এ নিয়ে নানা জটিলতার মধ্যে ঘটে যায় রানা প্লাজার দুর্ঘটনা।
নিজের উত্থান সম্পর্কে পরীমনি বলেন, “আমি আজ পরীমনি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি এই ‘রানা প্লাজা’ ছবির কারণে। এই ছবিতে অভিনয় করার সময় আমি খুব কেঁদেছি, এত কষ্ট পেয়েছি যে গ্লিসারিন দিয়ে কাঁদতে হয়নি। অভিনয়ের প্রমাণ দিয়েছি এই ছবিতে। কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য ছিল এতে, সেগুলোর জন্য কোনো ডামি ব্যবহার না করে নিজেই শট দিয়েছি। অনেকবার আহতও হয়েছি। সিনিয়ররা আমাদের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছেন।”
ছবিটি সম্পর্কে নায়ক সায়মন বলেন, ‘এ ছবিতে অভিনয় করার সময় আমি বলেছিলাম, এ ধরনের ছবিতে আমি আর কাজ করতে চাই না। মানে এ ধরনের ঘটনা যেন বাংলাদেশে আর না ঘটে, যা নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে হয়। আর আমরা শিল্পীরা যখন এ ধরনের গল্পে অভিনয় করি, তখন আমাদেরও খুব খারাপ লাগে।”
নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেন্সর বোর্ডে আটকে ছিল চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজা’। আলোচিত ছবিতে রানা প্লাজা ধসের বিভিন্ন দৃশ্য নিয়ে আপত্তি তোলে সেন্সর বোর্ড। এরপর ছবিটির ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। উচ্চ আদালতের অনুমতি নিয়ে অবশেষে ছাড়পত্র পায় এই ছবি।
২০১৩ সালে সাভারে বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়ে। এই ঘটনার ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামের এক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মাতা নজরুল ইসলাম খান তৈরি করেন ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্রটি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ছবিটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন তিনি।
সেন্সর বোর্ডের সদস্যরা আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সিনেমাতে গার্মেন্টস ধসে পড়ার যে দৃশ্যটি দেখানো হয়েছে, তা রীতিমতো ভয়াবহ। এমন দৃশ্য সংবলিত সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে তার ফলাফল হবে আরো ভয়াবহ। বাংলা সিনেমার বড় দর্শক হচ্ছে গার্মেন্টকর্মীরা। রানা প্লাজা ধসের ঘটনাটি তাদের আরো উত্তেজিত করে তুলবে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে এতে।’ তবে এই আপত্তি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। শিগগিরই সিনেমা হলে দর্শক দেখতে পাবে ছবিটি।
পরীমনি-সাইমন ছাড়াও এতে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, মিজু আহমেদ, কাবিলা, হাবিব খান, শিরিন আলম প্রমুখ। এর কাহিনী ও সংলাপ লিখেছেন মুজতবা সউদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন এ এইচ স্বপন। সংগীতায়োজন করেছেন আলী ইকরাম শুভ। শিল্প নির্দেশনায় ছিলেন কলন্তর, ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মান্নান।