মেহজাবীন এবার সুনীলের নীরা
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। তাই ঈদ সামনে রেখে নাট্য নির্মাতাদের এখন রাজ্যের ব্যস্ততা। যেন দম ফেলার সময় নেই। যে করেই হোক, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নাটকের কাজ শেষ করতে হবে। নতুবা ঈদের ছুটির বিনোদনের অন্যতম বড় মাধ্যম নাটক থেকে বঞ্চিত হবেন দর্শক। তরুণ নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহরও একই অবস্থা। শুটিং নিয়ে বেশ ব্যস্ত। এবার ঈদে বেশ কিছু নাটক নির্মাণ করছেন তিনি।
এই যখন অবস্থা, তখন একবার বান্নাহর শুটিং স্পট থেকে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। যেই ভাবনা, সেই কাজ। গৃহত্যাগী সূর্যটাকে সঙ্গে করে যখন উত্তরায় মন্দিরা শুটিংবাড়িতে পৌঁছালাম, তখন দুপুর। সূর্য মাথার ওপর অবস্থান করছে। প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠে গেলেও দেখলাম, প্রোডাকশনের লোকেরা বেশ কর্মতৎপর। ছয়তলায় শুটিং চলছে। সোজা চলে গেলাম ছয়তলায়। চারদিকে সুনসান নীরবতা। এর ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। কে কাঁদছে? এমন কৌতূহল নিয়ে ধীর পায়ে ঘরের ভেতর ঢুকলাম। সামনে গিয়ে বাম পাশের ঘরটাতে তাকাতেই দেখলাম, মনিটরের সামনে বসে আছেন নির্মাতা বান্নাহ। শট চলছে। ক্যামেরার সামনে মেহজাবীন ও ইরফান সাজ্জাদ। মেহজাবীন কোনো এক কারণে কষ্ট পেয়েছেন। মন খারাপ করে কাঁদছেন। তখন ইরফান সাজ্জাদ বিভিন্ন রকম কাণ্ড ঘটিয়ে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। একসময় সফল হন। মেহজাবীন মিষ্টি করে হেসে ওঠেন। শট ওকে। এবার পরের দৃশ্যের শটের জন্য প্রস্তুতি। চলছে সেট ডিজাইন। কিছুটা সময় লাগবে।
শট শেষে আমাকে দেখে বান্নাহ এগিয়ে এলেন। কুশল বিনিময় করে নিয়ে গেলেন মেকআপ রুমে। উদ্দেশ্য, নাটকে অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে অভিনয়শিল্পীদের মতামত জানা। মেহজাবীন মেকআপ রুমে বসে ঠোঁটে হালকা হয়ে যাওয়া লিপস্টিক দিচ্ছেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন করা ঠিক হবে কি না, এমন দ্বিধায় পড়লেও সেটাকে পাত্তা না দিয়ে প্রশ্ন করলাম নাটকের চরিত্র সম্পর্কে। মেহজাবীন এবার লিপস্টিকটা রাখলেন। চেয়ারে হেলান দিয়ে স্বভাবসুলভ মিষ্টি হেসে বললেন, ‘নাটকে আমার চরিত্রের নাম নীরা, যে কি না বোবা। কথা বলতে পারে না। আমাদের সমাজে এ ধরনের প্রতিবন্ধী মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকে ধরে নেয়, এদের বিয়ে হবে না। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবন থাকে না। কিন্তু এই নাটকে নীরা কথা বলতে না পারলেও সে জীবনে এমন একজন ছেলেকে পায়, যে ভালোবাসা দিয়ে ভুলিয়ে দেয় সে বোবা। নাটক আরম্ভ হওয়ার পর প্রথমে দর্শক হয়তো মনে করবে যে, মেয়েটা বোবা। নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলা হবে পরে। আসলে এমন কিছু হয় না। খুব সাধারণ একটি গল্প অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নাটকটি দেখার সময় দর্শক নিজের ভেতর এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি অনুভব করবেন।’
মেহজাবীনের কথা শেষ হতেই পাশে এসে দাঁড়ালেন ইরফান সাজ্জাদ। তিনি নাটকের কেন্দ্রীয় পুরুষ চরিত্র। নীরার সেই ভালোবাসার মানুষ। তাঁকেও ঠিক একই প্রশ্ন করলাম। তিনি আর বসলেন না, দাঁড়িয়েই বললেন, ‘জন নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করছি। জন আমার দৃষ্টিতে সৎ একজন ছেলে। ছেলেটি হঠাৎ করে বোবা একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়। মেয়েটি বোবা থাকায় ছেলের কোনো সমস্যা নেই; বরং সে মেয়েটিকে খুব ভালোবাসে। টেক কেয়ার করে। প্রেমের সম্পর্ক থেকে একসময় তারা বিয়ে করে।’
মেহাজাবীন ও ইরফান সাজ্জাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মেকআপ রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। পরের দৃশ্যের সেট প্রায় তৈরি। এই ফাঁকে নির্মাতার সঙ্গে নাটকের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে কথা বলার পালা। সাধারণত নির্মাতারা নাটকের কাহিনী আগে থেকে বলতে চান না। চমক রাখতে চান। মাবরুর রশিদ বান্নাহকে এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়ে নাটকের কাহিনী সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তিনি বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিলেন। তবে শর্ত জুড়ে দিলেন, পুরো গল্প বলা যাবে না। তারপর আমার রেকর্ডারটি নিজ হাতে নিয়ে সোফায় বসে বলতে আরম্ভ করলেন, “আমার এই নাটকটির নাম ‘হঠাৎ নীরার জন্য’। এই নাটকটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতা ‘নীরার জন্য’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করছি। নীরা এই গল্পের নায়িকা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার নীরা। তবে এখানে আমি নীরাকে আমার ডিরেক্টরিয়াল দৃষ্টিতে দেখেছি। আমি সুনীলের কবিতায় নীরাকে যেভাবে দেখেছি, সেভাবে তুলে ধরছি। নীরা কথা বলতে পারে না, বোবা। বোবা নীরার জীবনে একসময় জন নামে একজন ছেলের আবির্ভাব ঘটে। সে নীরাকে খুব ভালোবাসে। এই সম্পর্কে মাঝেমধ্যে মান-অভিমান, টানাপড়েন দেখা যায়। এভাবে মূলত গল্প এগিয়ে যায়। বাকিটা দর্শক নাটক দেখলে বুঝতে পারবেন।”
নাটকটি এনটিভির ঈদ অনুষ্ঠানমালায় প্রচারিত হবে। যদিও সময়টা এখনো নির্ধারিত হয়নি। তবে দর্শক নিয়মিত এনটিভিতে চোখ রাখলে নাটক প্রচারের সময় জেনে যাবেন।
যা হোক, কথা বলতে বলতে পরবর্তী দৃশ্যের সেট তৈরি হয়ে গেল। বান্নাহ উঠে গিয়ে আবার মনিটরের সামনে বসলেন। বিদায় নিতে চাইলাম। তিনি বিদায় না দিয়ে ডেকে আমাকে পাশে বসালেন। মেহজাবীন ও ইরফান সাজ্জাদের রোমান্টিক দৃশ্য। তারা ড্রয়িংরুমে কানামাছি খেলবেন। কয়েকবার শট নেয় হলো। নির্মাতা খুশি। শট শেষে আমি বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে বের হতেই দেখি, সূর্যটা গৃহে প্রবেশ করতে আরম্ভ করেছে।