নতুন কিছু শেখার আশা নিয়ে দিন শুরু করি : অমিতাভ বচ্চন
‘আমার দিন শুরু হয় নতুন কিছু শেখার আশা নিয়ে। তা ছাড়া এই বয়সে এসে আমি নিজেকে যথেষ্ট ভাগ্যবান মনে করি এই ভেবে যে, নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের পাশে থেকে এখন অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছি।’ সম্প্রতি কলকাতায় ‘তিন’ ছবির শুটিংয়ে এসে এক অবসরে সংবাদমাধ্যমের কাছে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরলেন প্রবাদপ্রতীম বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন।
অমিতাভ বচ্চন বলেন, ‘আমি চাই বয়স যাই হোক না কেন, আমার কাছে এখনো কাজ আসুক। তবে এটা ঠিক যে, যৌবনকালে যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি এখন আর সেই ধরনের চরিত্র আসে না। এখন প্রধানত ক্যারেক্টার রোলই হাতে আসে। তবে চরিত্রধর্মী সেই সব ছবিতে অভিনয় করতে আমার বেশ ভালোই লাগে।’
বর্তমানে ‘তিন’ ছবির শুটিংয়ে কলকাতায় রয়েছেন অমিতাভ। তাঁর অন্যতম প্রিয় শহরের মধ্যে অবশ্যই কলকাতা একটি। হাসতে হাসতে এ কথা জানিয়ে অমিতাভ বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের শুরু এই শহর থেকেই। আবার আমার জীবনের প্রথম চাকরিও এই শহরে। ১৯৬২ সাল থেকে টানা আট বছর এই শহরে কাটিয়েছি আমি। তাই এখনো এই শহরে এলে আমি নষ্ট্যালজিক হয়ে পড়ি। এই শহরের একটা নিজস্ব প্যাশন রয়েছে। আমি তো ইন্ডাস্ট্রিতে আমার সহকর্মীদের প্রায়ই বলি, যদি কোনো কারণে কারো মন খারাপ হয়ে যায়, তাহলে মন ঠিক করতে চাইলে চট করে কলকাতা থেকে ঘুরে এসো। দেখবে মন ভালো হয়ে যাবে।’
কলকাতা শহরে এসে ‘পিকু’ ছবিতে সাইকেল চালিয়েছেন অমিতাভ। এবারে ‘তিন’ ছবির শুটিংয়ে স্কুটার এমনকি টোটোও চালালেন। আর শুটিংয়ের ফাঁক গলে সময় পেলেই মাঝ রাতে কাউকে কিছু না জানিয়ে সটান বেরিয়ে পড়েন কলকাতার রাস্তায়। কোথায় যান? বেশ কিছুটা রহস্য রেখে অমিতাভ জানিয়ে দিলেন, ‘আগে যেখানে যেখানে থাকতাম, কাজ করতাম সেই জায়গাগুলোয় যাই। টালিগঞ্জেও যাই। ওখানে অবশ্য আমার বাবার বন্ধুরা থাকতেন। তবে কখন যাই, কেন যাই, সেটা কিন্তু বলব না।’
বলিউডের বুকে প্রায় পাঁচ দশক ধরে আধিপত্য বজায় রেখেছেন অমিতাভ। অতীত থেকে বর্তমা্নের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বলিউড সম্রাজ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। নিজের ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জানালেন, এত দিনের আমার কেরিয়ারের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তকে আমি সমানভাবে উপভোগ করেছি। তবে আমার কেরিয়ারের সময়কালকে কয়েকটি ভাগে ভাগ না করলে হয়তো সঠিক বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। আমার কেরিয়ারের প্রথমেই স্মরণ করতে হয় ‘সাত হিন্দুস্থানি’ ছবির পরিচালক খাজা আহমেদ আব্বাসকে। উনিই আমাকে প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন। এরপর আমার এবং আমার স্ত্রী জয়ার জীবনে গডফাদারের মতো ভূমিকা যিনি নিয়েছিলেন তিনি পরিচালক হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়। তাঁর অনেক ছবিতেই আমাকে অভিনয়ের সুযোগ করে দিয়েছিলেন তিনি। তারপর ‘দিওয়ার’ ‘শোলে’, ‘ত্রিশুল’-এর মতো একাধিক জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি। যার জন্য অবশ্যই পরিচালক সেলিম জাভেদ, রমেশ সিপ্পিদের অবদান রয়েছে। পরবর্তী সময়ে মনমোহন দেশাই এবং প্রকাশ মেহরার মতো জিনিয়াস ব্যক্তিদের কাছ থেকেও সুযোগ পেয়েছি। এরপর মুকুল আনন্দ এবং টিনু আনন্দর পরিচালনায় ‘অগ্নিপথ’-এর মতো অসাধারণ ছবিতেও অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। তারপর করন জোহর, আদিত্য চোপড়াদের সঙ্গেও কাজ করেছি। আর এখন তো সুজয় ঘোষ ও সুজিত সরকারের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করছি।
অমিতাভ বচ্চন আরো বলেন, ‘দীর্ঘ অভিনয় জীবনের নানা সময়ে বিভিন্ন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, এঁদের প্রত্যেকের ভাবনার ধরনটাই আলাদা আলাদা। তাই এই সব প্রতিভাবান পরিচালকের সান্নিধ্যে থেকে অভিনয়ের ক্ষেত্রেও প্রতি মুহূর্তে নতুন কিছু শেখার সুযোগও পেয়ে যাচ্ছি আমি।’