একজন গায়কের বড় হাতিয়ার গান : স্বপন বসু
‘আমি স্টেজ পেতে কিংবা জনপ্রিয়তার আলো কাড়ার জন্য গান করিনি কখনো। গানের প্রতি আমার আলাদা একটা দায়বদ্ধতা আছে। যেসব কথা গানবিষয়ক, যেগুলো প্রয়োজনীয়, আমি স্টেজে উঠে শুধু সেই কথাগুলোই বলি। আমার একমাত্র উদ্দেশ্য গানকে হাইলাইটস করা।’ সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের কাছে ধরা দিয়ে এভাবেই নিজেকে মেলে ধরলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী স্বপন বসু।
আজ নিজের মুখেই স্বপন বসু স্বীকার করে নিলেন, ‘আমি একতারা, দোতারা আর ব্যাঞ্জো নিয়ে মঞ্চে উঠে পারফর্ম করি। তখন অনেক শিল্পীই এই ট্র্যাডিশন শুরু করেননি। জীবনের এতগুলো বছর পার করে এসে আজও গানের জগতে আমি নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে পেরেছি।’
বাংলার বুকে লোকসংগীতের যে আলাদা একটা গুরুত্ব আছে, সে কথা আজ জোরের সঙ্গে দাবি করেন স্বপন বসু। অন্যান্য গানের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁর কথা, ‘সন্দেশ হয়তো একটু বেশি বিক্রি হয়, কিন্তু নারকেল নাড়ু বা খেজুর গুড়ের গুরুত্বটাই আলাদা।’
গান নিয়ে অকারণ বাড়াবাড়ি কখনই পছন্দ করেন না স্বপন বসু। বললেন, “যতটুকু দরকার তার বেশি কিছুই ভালো লাগে না। অনেকে গান গাইতে গিয়ে অকারণ মাথা ঝাঁকাতে থাকেন, খ্যাপামি করতে থাকেন। এটা তো স্বাস্থ্যকর নয়। যতটুকু দরকার, তার বেশি কি সত্যিই কিছু করা প্রয়োজন? আমার তো ওই সব দেখলে ভীষণ বোকা বোকা লাগে। আমাদের মনে রাখা উচিত, বাংলা ভাষার একটি নিজস্ব উচ্চারণ আছে। তা ছাড়া এই ভাষাটার আগে ‘মাতৃভাষা’ নামক শব্দটাও রয়েছে। তাই ‘হয়েছে কে হয়েচে’ জাতীয় উচ্চারণ করাটা ঠিক বলে আমি মোটেই মনে করি না। এ ধরনের কার্যকলাপ সংস্কৃতিবান কিংবা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আমি মনে করি, গান গাইতে গিয়ে গানের তাগিদে যতটা প্রয়োজন তার বাইরে বিকৃতির কোনো মানে হয় না। গানের ক্ষেত্রে দাঁত দেখা যাওয়া কিংবা মাড়ি দেখা যাওয়ার চেয়েও গানটা কতটা ভালো হলো, সেটাই সবচেয়ে জরুরি।”
বাংলা ব্যান্ড প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে স্বপন বসু জানালেন, ব্যান্ডের গান ভালোই লাগে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয়, প্রকৃত গান শিখে গান গাওয়ার দায়টা অনুভব করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘বিটলসকে দেখে উদ্বুদ্ধ হই আমরা, অথচ তাদের স্ট্রাগলটা নিয়ে অনেকেই ভাবি না। স্টেজে তাদের পারফর্ম দেখে মুগ্ধ হই আমরা, কিন্তু কীভাবে সেটা তৈরি হলো, সেটাও তো স্টাডি করা দরকার। যেকোনোভাবে প্রচারের ফোকাস পেতে হবে, এমনটা ভাবলে নেতার সঙ্গে আর গায়কের তফাত থাকল কোথায়! নেতারা ক্ষমতার আশপাশে ঘুরে বেড়ান। আজকাল দেখা যাচ্ছে, বেশ কিছু গায়কও ক্ষমতার আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ আমার মনে হয়, একজন গায়কের কাছে তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো তাঁর কণ্ঠের গান।‘

মনোজ বসু, কলকাতা