রাজনীতি এখন সর্বক্ষণের কাজ : শতাব্দী রায়
একসময় টলিউডের প্রথম সারির জনপ্রিয় অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে সমানতালে করেছেন যাত্রাও। তার পর রাজনীতিতে দিলেন হাতেখড়ি। আর রাজনীতির ময়দানে নেমে প্রথমেই হাঁকালেন ছক্কা। পশ্চিমবঙ্গে ভোটে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সাংসদ নির্বাচিত হয়ে গেলেন। রাজনীতি করতে গিয়ে অভিনয়জগৎকে বেশ খানিকটা দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। এবারে ফের অভিনয়ের টানে ফিরে এলেন, তা-ও থিয়েটারের মঞ্চে। ‘তিস্তা’ নাটকে বাঙালি বিবাহ-বিচ্ছিন্ন এক নারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন একসময় টালিউড দাপিয়ে বেড়ানো অভিনেত্রী শতাব্দী রায়।
খোলামেলা আড্ডার মেজাজে সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজেকে মেলে ধরলেন শতাব্দী। বললেন, ‘এত বছর আমার কাছে জীবন বলতে ছিল অভিনয়। এখন জীবনটা অনেকটাই দিল্লিনির্ভর। যেখানে আমার এলাকা, কর্মব্যস্ততার পর দিনের শেষটা বেডরুমে এসে দাঁড়িয়েছে। আমার ভালোলাগার জিনিসগুলোর জন্য সময়টা অনেক কমে গেছে। এখন মাসে চার দিন সময় বের করতে পারি না। তবে এখনো আমার কাছে কমার্শিয়াল ছবির অফার আসে। তবে মনে হয়, বাণিজ্যিক ছবিতে আমার আর তেমন কিছু দেওয়ার নেই। এতদিনে অনেক দিয়ে দিয়েছি। এখন অন্য ধারার ছবি বা যে ধরনের ছবি আমি করিনি—তেমন ছবি হলেই ভাবব। এর বাইরে আপাতত আর কিছু ভাবতে চাই না।’
তবে দীর্ঘদিন অভিনয়জগতের বাইরে থেকে কার্যত হাঁফ ধরে ওঠা শতাব্দী নিজেই নাটক করার আগ্রহ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শতাব্দীর সোজাকথা, ‘আমি মনে করি, অভিনয়টা হলো অভিনয়। তো, সেটা কমার্শিয়াল ছবি হলে একরকম, বাণিজ্যিক ছবি হলে একরকম, যাত্রা হলে একরকম, নাটক হলে একরকম, আবার টিভি সিরিয়ালে একরকম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিনয়ের ধারা কিছুটা আলাদা হলেও অভিনয়টা কিন্তু অভিনয়ই। তবে নাটকে অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রীদের সঙ্গে দর্শকের সরাসরি যোগাযোগ হয়।’
শতাব্দী মনে করেন, বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে নাটকে একজন অভিনেত্রী নিজেকে সম্পূর্ণভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। তবে ‘তিস্তা’ নাটকে অভিনয়ের পর আরো থিয়েটার করতে চান কি না, সে বিষয়ে তিনি কিন্তু বেশ দোটানায়। জানিয়ে দিলেন, ‘আমি তো সেই অর্থে প্ল্যান করে চলি না। কখনই কালকের প্ল্যান আজ করি না। তা ছাড়া আগামী কয়েক মাস পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ব্যস্ত থাকব। ওদিকে সামনের মাস থেকে সংসদে অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এপ্রিল থেকে চলবে নির্বাচনী প্রচার। সুতরাং তখন তো কোনো সময়ই দিতে পারব না।’
আজ রাজনীতির শিখরে দাপিয়ে বেড়ানো এই অভিনেত্রীর হাতে যে সময় খুবই কম, সে কথা স্বীকার করে নিয়েই জানালেন, ‘আমার কাছে এক ঘণ্টা মানে এক ঘণ্টা। আমি জানি, সে সময়ের কাজটা আমাকেই করে নিতে হবে। অভিনয় আমার প্যাশন, আর রাজনীতিটা তো এখন আমার সর্বক্ষণের কাজ। তবে কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সময়টা বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে না।’
অভিনেত্রী-রাজনীতিবিদ ছাড়াও শতাব্দী রায়ের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি একজন কবিও বটে। ভালো কবিতা লিখতেন একসময়ে। তবে আজকাল হয়তো ছয় মাসে একবার কলম ধরা হয়। রোজ কবিতা লেখা যে আর হয়ে ওঠে না, সে কথা নিজের মুখেই স্বীকার করলেন, ‘কবি নামটা টিকিয়ে রাখতেই ছয় মাসে বোধ হয় কলম ধরি। তবে ভাবনাগুলো মাথায় আসে, ভিড় করে। কিন্তু খাতা অবধি আর পৌঁছাতে পারছে না।’
দিনভর চূড়ান্ত ব্যস্ততার ফাঁক গলেও সংসার সামলান শতাব্দী। বললেন, ‘আমার স্বামী বিয়ের আগেই জানতেন, তিনি একজন অভিনেত্রীকে বিয়ে করছেন। তাই আমার ব্যস্ততা তিনি বুঝতেন। তবে সাংসদ হওয়ার পর সেই ব্যস্ততা অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে মাঝেমধ্যে একটু রিঅ্যাক্ট যে করে না, তা নয়। তবে বাড়িতে ও (স্বামী) অনেকটা সময় দেয়। বিষয়টা নিয়ে আমার আক্ষেপ হলেও মনকে বোঝাই, এখন তো অনেক মা-ই কাজ করেন। সেই রকম আমাকেও করতে হয়।’
রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে আজ যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, সুযোগ পেলেই অন্তত দু-একটা সিনেমা ঠিকই দেখে ফেলেন তিনি। হালফিলের সিনেমা সম্পর্কে মতামত জানাতে গিয়ে বললেন, ‘শুধু মাল্টিপ্লেক্স ছবি দিয়ে আগামী দিনে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। সেটা সবার মনে রাখা দরকার। তবে এখনকার ছবিতে অনেক গান খুব সুন্দর হচ্ছে, আবার ছবির অবস্থা অনেক ক্ষেত্রেই শোচনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু বিদেশি লোকেশন দিয়ে ছবি চলবে না।’
আজ অভিনয় থেকে অনেকটা দূরে থাকলেও অভিনয়ের সেই খিদে কিন্তু আজও রয়ে গেছে শতাব্দীর। বললেন, ‘ভালো অফার পেলে পুরোনো জুটির সঙ্গে পর্দায় কামব্যাক করাই যায়। মন্দ হবে না তাহলে ব্যাপারটা। ভবিষ্যতে মানুষ শতাব্দী রায়কে সাংসদ কিংবা অভিনেত্রী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে মনে রাখুক—সেটাই চাই। ভালো মানুষ না হলে কোনো ক্ষেত্রেই সফল হওয়া যায় না। তাই সবার আগে একজন ভালো মানুষ হতে হয়, তার পর বাকি সবকিছু।’