হলিউড থেকে নকল করা বলিউডের ১০ সিনেমা
‘বলিউডে প্রতি শুক্রবারই মুক্তি পায় নতুন কোনো ছবি’—বলিউড নিয়ে খুবই প্রচলিত একটি কৌতুক এটি। এই কৌতুকের স্রষ্টা বলিউডের চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, প্রতিদিন ছবি মুক্তি দেওয়ার এই হিড়িকই কমিয়ে দিচ্ছে বলিউড সিনেমার মান আর যার কারণে নির্মাতাদের নকল করতে হয় কাহিনী। শুধু কি বিশ্লেষক! বিভিন্ন সময়ে বলিউডের নির্মাতাদের এমন নকলবাজি কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় মুখর বহু বলিউডভক্তও। হলিউড থেকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ নকল করা সিনেমার তালিকাটি অনেক বিশাল, যার মধ্য থেকে ১০টি নিয়ে থাকছে এই আয়োজনে।
১০. লাইফ ইন এ মেট্রো (দি অ্যাপার্টমেন্ট)
‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ প্রশংসিত হয়েছিল বটে। তবে প্রশংসাকারীরা অনেকেই হয়তো ‘দি অ্যাপার্টমেন্ট (১৯৬০)’ সিনেমাটি দেখেননি। বলিউডের অন্যতম সৃষ্টিশীল নির্মাতা হিসেবে পরিচিত অনুরাগ বসু অস্কারজয়ী এই সিনেমার প্রায় প্রতিটি দৃশ্যই নকল করে নির্মাণ করেন ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’।
৯. দিল হ্যায় কে মানতা নাহি (ইট হ্যাপেনড ওয়ান নাইট)
মহেশ ভাটের ‘ক্ল্যাসিক্যাল পাইরেসি’ হিসেবে পরিচিত এই সিনেমা ফ্র্যাঙ্ক কাপ্রার ‘ইট হ্যাপেনড ওয়ান নাইট’ (১৯৩৪)-এর নকল। অবশ্য মহেশ ভাট পরিচালনার ইতিহাসে বেশ কয়েকটি হলিউড সিনেমাকে নকল করেন এবং প্রতিবারই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে একে তাঁর ‘কঠিন পরিশ্রমের ফসল’ বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। যদিও আমির খান আর পূজা ভাট জুটির রসায়ন সিনেমাটিকে করে তুলেছে উপভোগ্য।
৮. জিসম (বডি হিট)
রগরগে সব দৃশ্য আর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা ভারতে প্রতিদিন হয় না, যার কল্যাণে এই ‘নকল’ করা সিনেমাটি ব্যবসার হিসেবে উতরে যায় বেশ ভালোভাবেই। যদিও ‘বডি হিট (১৯৮১)’ সিনেমাটির বিস্তার মোটেও নাচ-গান আর শরীর প্রদর্শনীর ঘেরাটোপে আটকে ছিল না। বাবার নকল করার ‘গুণ’ নির্মাতা হিসেবে পূজা ভাট নিজেও অক্ষুণ্ণ রেখেছেন বটে!
৭. কোয়ি মিল গ্যায়া (দি এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল)
বলা যায়, ইন্ডিয়ায় সাই-ফাই ঘরানার সিনেমার যাত্রা শুরু হয় এই সিনেমার মাধ্যমেই। প্রখ্যাত নির্মাতা স্পিলবার্গের অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘ই টি’-কে ইন্ডিয়ান ‘কোয়ি মিল গ্যায়া’ রূপ দেন রাকেশ রোশন আর রাসেল ক্রোর জায়গায় অবতীর্ণ হন হৃতিক রোশন। যাহোক, হলিউড থেকে ধার করা কনসেপ্ট হলেও সিনেমাটির জন্য রাকেশ রোশন প্রশংসা আর অর্থ, দুটোই দিব্যি কামিয়ে নিতে পেরেছিলেন।
৬. ব্ল্যাক (দ্য মিরাকল ওয়ার্কার)
সঞ্জয় লীলা বনসালি সচরাচর প্রশংসা কুড়িয়ে বেড়ান তাঁর নির্মাণ দক্ষতার জন্য। কিন্তু তিনিও বাদ যাননি নকল করা থেকে। হলিউডের ‘দ্য মিরাকল ওয়ার্কার’-কে বানিয়ে দিলেন বলিউডি ‘ব্ল্যাক’। ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয়, বনসালি সিনেমাটির শুরু কিংবা শেষ কোথাও একবারের জন্যও প্রকৃত চিত্রনাট্য লেখকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাননি।
৫. কিঁউ কি (ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাকুস নেস্ট)
অস্কারজয়ী ‘ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাকুস নেস্ট’ সিনেমাটি নিঃসন্দেহে ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি নির্মাণ, যার ইন্ডিয়ান ভার্সন ‘কিউ কি’। জ্যাক নিকলসনের ধারেকাছে না হলেও সিনেমাটিতে সালমান খানের অভিনয় প্রশংসা পেয়েছিল বোদ্ধাদের কাছ থেকে। কিন্তু এই ধ্রুপদী সিনেমাটিকে প্রচলিত বলিউডি রূপ দিতে গিয়েই ‘গোঁজামিল’ বাঁধিয়ে দিয়েছিলেন পরিচালক। দিন শেষে আরেকটি গড়পড়তা বলিউড সিনেমার তকমাই জুটেছিল এর ভাগ্যে।
৪. মার্ডার (আনফেইথফুল)
হলিউড থেকে নকল করা বলিউড সিনেমার তালিকায় ‘ভাট ক্যাম্প’-এর অন্যতম নিদর্শন ‘মার্ডার’। নিন্দুকরা বলে থাকেন, বলিউড সিনেমার নির্মাতাদের জন্য একটি আসল চিত্রনাট্য বানানো আর ‘এলিয়েন’ ধরতে পারা নাকি একই রকমের বিষয়! ২০০২ সালে ‘আনফেইথফুল’ মুক্তি পায় একটি ‘ইরোটিক-ড্রামা’ হিসেবে, যার মাত্র দুই বছর পর ২০০৪ সালেই সিনেমাটির ‘নকল’ দিয়ে দারুণ ব্যবসাও করে নিয়েছে ‘ভাট ক্যাম্প’!
৩. সরকার (দ্য গডফাদার)
ভারতীয় সিনেমার জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় ‘খুঁটি’ হিসেবে পরিচিত যে কয়জন পরিচালক আছেন, রামগোপাল ভার্মা তাঁদেরই একজন। রামগোপালের ‘সরকার’ যে ‘দ্য গডফাদার’-এর বলিউডি সংস্করণ, সে তো সবাই জানেন! ‘দ্য গডফাদার’-এর তুলনায় বলিউডের ‘সরকার’-এর নির্মাণ কিংবা অভিনয়, দুটোই ছিল মধ্য মানের। এত কিছুর মধ্যেও ভালো বিষয় হচ্ছে, রামগোপাল ভার্মা প্রকাশ্যে ‘সরকার’কে ‘দ্য গডফাদার’-এর প্রতি ‘ট্রিবিউট’ হিসেবে আখ্যা দেন।
২. অগ্নিপথ (স্কারফেস)
অমিতাভ বচ্চনের মতো গুণী অভিনেতাকেও এই তালিকায় থাকতে হবে? ‘অগ্নিপথ’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন হতে চেয়েছিলেন ‘স্কারফেস’-এর ‘টনি মন্টানা’ তথা আল-পাচিনো, যা পুরো ছবিতে তাঁর চলন বলন, গলার স্বর পরিবর্তনের প্রচেষ্টায় সুস্পষ্ট।
১. কাঁটে (রিজারভোয়ের ডগস)
প্রযুক্তির দিক মূল্যায়ন করতে গেলে ‘কাঁটে’ পুরোটাই ‘ওয়েস্টার্ন’, কিন্তু এদিকটি ছাড়া বাকি সবকিছুতেই নকলের আধিক্য সিনেমাটিকে করে তুলেছে ‘নিম্নমানের’। যেখানে পুরো সিনেমা খুঁজলেও ‘রিয়েলিজম’-এর টিকিটিও পাওয়া যাবে না, সঙ্গে আছে বাড়াবাড়ি স্টাইল আর সম্পূর্ণ নকল সংলাপ। কুয়েন্তিন তারান্তিনোর ‘রিজারভোয়ের ডগস’ আগাগোড়া নকল করলেও মানের দিক থেকে এর ধারেকাছেও যেতে পারেনি ছবিটি।