শিরোনামহীনের ২০ বছর
‘সংগীতশিল্পীদের সম্মান এ দেশে খুব কম’
নামেই ‘শিরোনামহীন’, তবে দেশের সেরা ব্যান্ডগুলোর কাতারে শিরোনামের শীর্ষে থাকার মতোই এক গানের দলের নাম এটি। আজ বৃহস্পতিবার ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ—এরই সঙ্গে প্রতিষ্ঠার দুই দশক পার করে ফেলল বাংলাদেশের এই ভিন্ন ঘরানার ব্যান্ড দলটি। বর্তমান ব্যান্ডটির লাইনআপ—ড্রামসে আহমেদ শাফিন, লিড গিটারে দিয়াত খান, কিবোর্ডে রাসেল, ভোকালে তানজির তুহিন এবং বেইজ গিটারে জিয়াউর রহমান জিয়া। ২০ বছরে পূর্তিতে আজ বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই ব্যান্ডটির। তবে তিনটি বড় বড় বৈশাখী কনসার্টে গান গাইছেন তাঁরা।
তবে ভক্তদের জন্য সুখবর, চলতি বছরজুড়েই তাঁরা ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করবেন। প্রতি মাসে নতুন একটি করে গান উপহার দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা পরিকল্পনা করে রেখেছেন অনেককিছু। এমনটিই জানিয়েছেন শিরোনামহীন ব্যান্ডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বেইজ গিটারিস্ট জিয়াউর রহমান জিয়া। ২০ বছরে ব্যান্ডটি পদাপর্ণ উপলক্ষে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপে আরো অনেক কথাই বলেছেন তিনি।
‘শিরোনামহীন’ ব্যান্ডটির নামের পিছনের গল্প জানতে চাইলে উত্তরে জিয়া বলেন, “আমাদের ৪৮ টি গান তৈরি ছিল। কিন্তু কোনো গানের আমরা শিরোনাম ঠিক করিনি। এটা ১৯৯৬ সালের কথা। ওই বছরের পহেলা বৈশাখে আমরা প্রথমবারের মতো ‘পদাতিক নাট্যচক্র’ থেকে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম গান গাওয়ার জন্য। আমন্ত্রণ পেয়ে আমরা খুব খুশি। ভালোভাবেই প্রথমবারের মতো আমরা পারফর্ম শেষ করেছিলাম। যেহেতু প্রথম কনসার্টে কোনো গানের শিরোনাম ঠিক করা ছিল না, তাই সেদিনেই ব্যান্ডের নাম ‘শিরোনামহীন’ রেখে দেই। তখন আমার সঙ্গে ছিল জুয়েল ও বুলবুল। দেখতে দেখতে আমাদের যাত্রার ২০ বছর পূর্ণ হলো। এটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। তবে এখনো অনেকেই জানেন না যে আমাদের যাত্রা পহেলা বৈশাখে শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমরা বেশ উপভোগ করি।”
২০ বছরের পুরো যাত্রা কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের উত্তরে জিয়া বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের বড় বড় গল্প রয়েছে যা হয়তো বলে বোঝানো যাবে না। আমি মনে করি, সংগীত একটা মানুষকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে সাহায্য করে। এর ব্যাখ্যা আমার কাছে অনেক আছে। তবে এখন একটা কারণ বলি তা হলো, দেশের কোনো অনাথ কিংবা গরিব শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে সবার আগে সংগীতশিল্পীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমরা কনসার্ট করে সেই অর্থ ওই শিশুর অভিভাবকদের কাছে তুলে দেই। আর ব্যক্তিজীবনে সংগীতের জন্য আমাদের ত্যাগের পরিমাণ অনেক বেশি। টাকা দিয়ে গান শোনে, সংগীতশিল্পীদের সম্মান এ দেশে খুব কম করা হয়। তাই সংগীতশিল্পীরা অনেক সময় গান ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে শ্রোতাদের হতাশ করতে চাইনি। চাকরি না করে নিজেই বহু কষ্টে একটি আর্কিটেকচার ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছি। এর পেছনে শুধু একটাই কারণ, আমি স্থপতি হয়েও মনে প্রাণে গান-বাজনা করতে চেয়েছিলাম।’
জিয়া আরো বলেন, “দীর্ঘ ২০ বছরের যাত্রায় আমাদের কিছু ভুল কিছু শুদ্ধ আছে। দ্রুত ভালো কিছু করতে চাইলে সেটার ফলাফল ভালো হয় না। ব্যান্ডও ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এটা আমার অভিমত। আমাদের প্রথম গানের অ্যালবাম ‘জাহাজী’ ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর আমরা খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ার আশা করিনি। মনের ভেতর থেকে গাওয়ার চেষ্টা এবং প্রতিটি মুহূর্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম আমরা।”
দীর্ঘ ২০ বছরে ১০০০ এর বেশি লাইভ কনসার্ট করেছেন। অনুভূতি কেমন? উত্তরে জিয়া বলেন, ‘মিশ্র অনুভূতি। তবে সুখের বিষয় একটাই, আমরা এক সাথে সফলতার সঙ্গে ২০ বছর পার করেছি।’

নাইস নূর