এবারের ‘ইত্যাদি’ ধারণ করা হয়েছে নৈসর্গিক শোভার লীলাভূমি নেত্রকোণায়। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে বিজয়পুরে সাদামাটির পাহাড়ের সামনে। সবুজ বনানী, পাহাড় আর অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সাজানো মঞ্চে ধারণ করা হয় এবারের পর্বটি। যাতে থাকছে নেত্রকোণার নন্দিত ব্যক্তিদের নান্দনিক উপস্থিতি।

অধিকাংশ সময়ই রাতের আলোকিত মঞ্চে ‘ইত্যাদি’ ধারণ করা হলেও এবার দিনের আলোর পড়ন্ত আভায় শুটিং হয়েছে। অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হয় ১৩ সেপ্টেম্বর। সে উপলক্ষে নেত্রকোণায় ছিল উৎসবের আমেজ।  দুপুর ২টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেন। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ আশেপাশের পাহাড়, গাছ ও লেকের পাড়ে দাঁড়িয়ে ‘ইত্যাদি’র শুটিং উপভোগ করেন। কাজটি চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।

নির্মাতা হানিফ সংকেত জানান, এবারের অনুষ্ঠানে মাটি ও মানুষের শিল্পী নেত্রকোণার সন্তান কুদ্দুস বয়াতি এবং ইসলাম উদ্দিন পালাকার দু’জনে একসাথে তাদের পরিচিত ঢংয়ে নেত্রকোণা অঞ্চলের দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটির সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদি। এছাড়াও নেত্রকোণাকে নিয়ে মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায়, হানিফ সংকেতের সুরে এবং মেহেদির সংগীতায়োজনে একটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেছেন বিজয়পুরেরই স্থানীয় দুই শতাধিক গারো, হাজং এবং বাঙালি নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন মালা মার্থা আরেং, কণ্ঠ দিয়েছেন পুলক, তানজিনা রুমা, মোমিন বিশ্বাস ও নোশিন তাবাসসুম। গানটি চিত্রায়ণ করা হয়েছে দুর্গাপুরেরই কিছু মনোরম লোকেশানে।

দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান নেত্রকোণাকে ঘিরে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক মলয় কুমার গাঙ্গুলী। যার বাড়িও নেত্রকোণায়। নির্বাচিত দর্শক এবং আমন্ত্রিত শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলী গেয়েছেন তার নিজের গাওয়া ৪টি গানের অংশবিশেষ।

হানিফ সংকেত বলেন, ‘‘শেকড় সন্ধানী ‘ইত্যাদি’ সবসময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচার বিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয়ছোঁয়া প্রতিবেদন। যাতে রয়েছে পাহাড়-নদীর নান্দনিক স্বপ্নিল সৌন্দর্যে ঘেরা নেত্রকোণার ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিভিন্ন প্রত্ন-নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন এবং কীর্তিমান ব্যক্তিদের ওপর তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।’’ 

চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ট্রেনের যাত্রী, গার্ড ও চালকের কাছে এক ভয়ংকর আতংক। এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে একদল তরুণ-তরুণী। এবারের অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় এই তরুণদের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের গল্পটি। রয়েছে মৌলভীবাজারের মানবিক মানুষ অমলেন্দু কুমার দাশের ওপর একটি মানবিক প্রতিবেদন। আরও রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত গিয়ংবকগাং প্রাসাদের ওপর একটি প্রতিবেদন। 

এছাড়াও নেত্রকোণার মঞ্চে যথারীতি সমসাময়িক বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে রয়েছে নানি-নাতির কথার মাতামাতি। নিয়মিত অন্যান্য পর্বসহ রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস নাট্যাংশ।

বরাবরের মতো এবারও ‘ইত্যাদি’র শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন যথারীতি রানা সরকার ও মোহাম্মদ মামুন। পর্বটি একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচার হবে ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। 

‘ইত্যাদি’ রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।