শাড়ি দিয়ে শুরু হোক বৈশাখ
আবার নতুন বছর, আবার পয়লা বৈশাখ। নতুন শাড়ি, নতুন পোশাকটা না হলে কি হয়? কেমনই বা এখনকার চল! শাড়িতে কিছুটা নতুনত্ব,পোশাকের কাটছাটে বদল?
কেউ বলেন, নতুন পোশাকেই শুরু হোক বছরটা। কেউ বলেন, সারাবছরই তো একই ধরণের পোশাক, হোক না দিনটা শাড়ি দিয়ে শুরু!
এসব কিছু নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে কথা হয় দেশের খ্যাতনামা কয়েকজন ডিজাইনারের সঙ্গে।
পয়লা বৈশাখে এবার পোশাকের ধরন ও নকশা কেমন, এ বিষয়ে কথা বলেন ‘দেশাল’- এর স্বত্ত্বাধিকারী ও ডিজাইনার ইশরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় লাল সাদার পাশাপাশি অন্যান্য রং দিয়ে কাজ করি। খুব ঘন নীল, সবুজ, লাল, হলুদ ইত্যাদি রং ব্যবহার করি। সাধারণত মৌলিক রং ব্যবহার করি কাজে।’
এবার বৈশাখী আয়োজনে দেশালের থিম একটু ব্যতিক্রমী জানিয়ে ইশরাত বলেন,‘দৈনন্দিন জীবনের কিছু মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে পোশাকে। একটি মেয়ে মাছ কাটছে শাড়ি পরে। তার ঢেউ খেলানো চুল এলিয়ে রয়েছে। আবার হয়তো একটি মেয়ে শাড়ি পরে চুল এলিয়ে বসে রয়েছে। সামনে একটি কুপি জ্বলছে। সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে- এমনই কিছু দৈনন্দিন জীবনে ঘটনা তুলে আনার চেষ্টা করেছি আমরা। এ ছাড়া পোশাকের থিমে রয়েছে পেশাজীবীরা। জেলে পাড়ার জেলে, বেদেনি, চুরিওয়ালী ইত্যাদি।
ডিজাইনার ইশরাত জাহান আরো বলেন, ‘আমরা শাড়ি, ফতুয়া, কামিজ তৈরি করেছি। কামিজগুলো সাধারণ ডিজাইনের। তবে হাতা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেছি।’
পয়লা বৈশাখের এবারের পোশাকের ধরন নিয়ে ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, ‘এবার পয়লা বৈশাখের পোশাকের ধরনে আমূল কোনো পরিবর্তন হয়নি। চিরাচরিতভাবে লাল-সাদা মূল রং। তবে আমরা সবসময় বিষয়ভিত্তিক ফ্যাশন করি। এবার তিনটি থিম নিয়ে কাজ করেছি। প্রথমত আলাম (কাপড়ে তোলার জন্য ফুলের নকশা করা এক ধরনের বস্ত্রখণ্ড। চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষেরা বয়ন কর্মে এর ব্যবহার করে।) দ্বিতীয়ত কাইয়ুম চৌধুরীর রেখাচিত্র। তৃতীয়ত নকশিকাঁথা। শাড়ির পাশাপাশি আমরা টপস, গাউন ধরনের সালোয়ার কামিজ রেখেছি।’
ডিজাইনার ও গবেষক চন্দ্রশেখর সাহা বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের দিনটিতে লাল- সাদা রংকে প্রধান্য দেওয়া হয়। শাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হয়; পাঞ্জাবিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এটিই বাঙালিয়ানা। তবে অনেকেই এখন কামিজ, টিশার্ট তৈরি করছে। কেন করছে বুঝি না। একটি বাচ্চা মেয়েও উৎসবের দিন শাড়ি পরতে চায়। সে অনুযায়ী শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। একজন বয়ঃসন্ধি মেয়ের জন্য কেন অন্যান্য পোশাক তৈরি করতে হবে?’
তিনি আরো বলেন, ‘এ ছাড়া এখন সাদা – লালের পাশাপাশি অন্যান্য রংও ব্যবহার করা হচ্ছে পোশাকে। তবে পয়লা বৈশাখের আবহাওয়াটা সাদা লালের। ৩৬৫ দিনতো অন্যান্য পোশাক পরছেই। একদিন শাড়িটা পরলে ক্ষতি কি?’
ঐতিহ্যগতভাবে শাড়ি-পাঞ্জাবি বাঙালির মূল পোশাক জানিয়ে ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, ‘শাড়িতো পরবেই। তবে দুপুরে বা বিকেলের অন্য অনুষ্ঠানে সালোয়ার কামিজও পরা যেতে পারে। তবে সবার আগে শাড়িকে প্রাধান্য দিতে হবে।’
ডিজাইনার ইশরাত জাহান বলেন, ‘শাড়িতো বাঙালির মৌলিক পোশাক। ভাষা যেমন নিজস্ব গতিতে চলে পোশাকও তেমন নিজস্ব গতিতে চলে। আমরা শাড়ি অবশ্যই পরবো।’
তবে স্ব্স্তির জন্য কেউ যদি সালোয়ার কামিজ বা ফতুয়া পরতে চায় পরতে পারে বলে মত তাঁর।