অনন্যা
ফ্যাশনের জন্য চাই সচেতনতা : আফরোজা চৈতি
টেলিভিশনে সাধারণত বেশির ভাগ নারীই উপস্থাপক কিংবা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হওয়ার জন্য কাজ করতে আগ্রহী। কিন্তু আফরোজা চৈতি চেয়েছিলেন, ক্যামেরার পেছনে কাজ করতে। নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে তিনি সফলও হয়েছেন। আজ তিনি সময় টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রযোজক। সংসার ও চাকরি সামলে দিব্যি আনন্দে জীবন কাটাচ্ছেন আফরোজা চৈতি। কারণ একটাই, তিনি নিজেকে সময় দিতে জানেন। তাঁর মতে, এটিই ভালো থাকার প্রথম ও প্রধান শর্ত। এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে নিজের ভালোলাগা আর পছন্দের বিষয় নিয়ে সাবলীলভাবে জানিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন : টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে কেন যোগ দিলেন?
আফরোজা চৈতি : আমি নাটক ও নাট্যতত্ত্বে পড়াশোনা করেছি। তাই এমন একটি পেশা খুঁজেছিলাম, যেটা আমার পড়াশোনার বিষয়ের সঙ্গে যায় এবং মেধার সঠিক ব্যবহার করতে পারব। মূলত ক্যামেরার পেছনে কাজ করতে আমার ভালো লাগে। শুরুতে আমাকে সংবাদ উপস্থাপক হতে বলা হয়েছিল। আমি রাজি হইনি। কারণ, গতানুগতিক কিছু চাইনি। আমি বৈচিত্র্য পছন্দ করি। নতুন জায়গায় যেতে, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে, নতুন কিছু আবিষ্কার করতে আমার ভালো লাগে।
প্রশ্ন : এই পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের কী সম্পর্ক আছে?
আফরোজা চৈতি : তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। তবে আমি মনে করি, যে নারী গ্রামে আলু চাষ করেন, তাঁরও নিজস্ব একটা স্টাইল রয়েছে। আমার পেশায় শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের চেয়ে ফতুয়া-জিন্সই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের এবং মানানসইও বটে। পেশার সঙ্গে ফ্যাশনের সম্পর্কের কথা যদি বলে থাকেন, তাহলে কর্মক্ষেত্রে এটাই আমার কাছে ফ্যাশন।
প্রশ্ন : স্টাইল বা ফ্যাশন বলতে আপনি কী বোঝেন?
আফরোজা চৈতি : ফ্যাশন মানে আমি শুধু পোশাককে বুঝি না। সামগ্রিক জীবনচর্চাকে বুঝি। যার মাধ্যমে মানুষটির শিক্ষা, রুচিবোধ সবকিছু প্রকাশ পাবে। ফ্যাশন ব্যক্তিত্বের বিষয়, ব্যক্তিগত বিষয়। মূলত যেটা আমার কাছে ভালো লাগে, সেটাই ফ্যাশন—যা আমার ব্যক্তিত্বকে উপস্থাপন করবে, আমার পোশাককে উপস্থাপন করবে।
প্রশ্ন : প্রত্যেক মানুষের ফ্যাশন বিষয়ে গ্রুমিং থাকা কি প্রয়োজন?
আফরোজা চৈতি : আমার মনে হয় না, এটার জন্য আলাদা কোনো গ্রুমিংয়ের প্রয়োজন আছে। এর জন্য সচেতনতার প্রয়োজন। আমি কাজল পরব না মালা পরব, সেটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তাই এসব বিষয়ে গ্রুমিং না করে মেধার গ্রুমিং করা বেশি জরুরি। এ জন্য আত্মিক সৌন্দর্যের, ব্যক্তিত্ব ও আচরণের গ্রুমিং প্রয়োজন। আমার বাবা বলতেন, তুমি যে একজন মানুষ, সেটা প্রমাণ করার জন্য তোমাকে চর্চা করতে হবে; সংগ্রাম করতে হবে। এ জন্য ইতিবাচক চিন্তাধারার গ্রুমিং প্রয়োজন।
প্রশ্ন : পেশার ক্ষেত্রে আপনি কেমন পোশাক বেছে নেন?
আফরোজা চৈতি : ফতুয়া ও জিন্স। এই পোশাক আমার জন্য আরামদায়ক এবং বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের।
প্রশ্ন : ব্যক্তিগত জীবনে কোন ধরনের পোশাক আপনার ভালো লাগে?
আফরোজা চৈতি : শাড়ি পরতে খুবই পছন্দ করি। সত্যি কথা বলতে কি, সালোয়ার-কামিজ আমার একদমই ভালো লাগে না।
প্রশ্ন : সেরা ফ্যাশন ডিজাইনার কে?
আফরোজা চৈতি : আমি নিজেই আমার ফ্যাশন ডিজাইনার। নিজের যা ভালো লাগে, তা-ই পরি। তবে ইয়েলো, আড়ং, বিবিয়ানার পোশাকগুলো আমার পছন্দ।
প্রশ্ন : আপনজনের কারো কোনো ফ্যাশন ট্রেন্ড এখনো কি অনুসরণ করেন?
আফরোজা চৈতি : না, আপনজনের কিছু অনুসরণ করি না। তবে যখন থিয়েটার করতাম, তখন বিবি রাসেলের সঙ্গে আমার দেখা হতো। তিনি কপালে বড় টিপ পরতেন। সেই থেকে আমি কপালে বড় টিপ পরি।
প্রশ্ন : কোন অনুষঙ্গটি আপনার বেশি ভালো লাগে?
আফরোজা চৈতি : টিপ। শাড়ি পরলে চোখে হালকা কাজল দিই, সেই সঙ্গে কপালে বড় টিপ পরি। ব্যস, আমার সাজ পরিপূর্ণ।
প্রশ্ন : পোশাক না অনুষঙ্গ, কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দেন?
আফরোজা চৈতি : দুটোই। একটি আরেকটির পরিপূরক। টিপ আমার ভালো লাগে, কিন্তু ফতুয়ার সঙ্গে পরলে খুব একটা মানাবে না। আবার শাড়ি পরে যদি সঙ্গে টিপ না পরি, তাহলে বেমানান লাগবে।
প্রশ্ন : কোন রঙের পোশাক পরতে বেশি ভালো লাগে?
আফরোজা চৈতি : সাদা-কালো, কমলা ও ম্যাজেন্টা রঙের পোশাক পরতে ভালো লাগে। সব ধরনের উজ্জ্বল রং আমার খুব প্রিয়। তবে শুধু কালো খুব একটা পরি না। সাদার সঙ্গে কালো পরতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন : পার্লারে গিয়ে না বাসায় পরিচর্যা—কোনটিকে প্রাধান্য দেন?
আফরোজা চৈতি : আমি পরিচর্যা খুব একটা করি না। তবে মাঝেমধ্যে আমি স্পা নিই। আমি মনে করি, সময় ও সুযোগ থাকলে অবশ্যই সব নারীকে পার্লারে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : প্রতিটি নারীর কোন বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত?
আফরোজা চৈতি : শিক্ষা, জ্ঞান, আদবকেতা। এই বিষয়গুলোতে অবশ্যই সচেতন হওয়া জরুরি। এগুলো ঠিক থাকলে পোশাকও ঠিক থাকবে। এগুলো আপনার ব্যক্তিত্বেরও প্রকাশ করবে।
প্রশ্ন : চাকরিজীবী নারী বা কোনো পেশায় জড়িত থাকা নারীদের কি বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি?
আফরোজা চৈতি : অবশ্যই। কারণ, আমার নিজের জন্য সময় রাখা জরুরি। আমাকে দেখতে ভালো লাগলে আমার মন ভালো থাকবে। তাই প্রত্যেক মানুষের নিজের শরীর ও মনের যত্ন নেওয়া জরুরি।
প্রশ্ন : নিজেকে ফিট রাখতে কী করেন?
আফরোজা চৈতি : ফুর্তিতে থাকি, আনন্দে থাকি। এটাই প্রথম ও প্রধান শর্ত। সুস্থ থাকতে চাইলে মানসিকভাবে আনন্দে থাকা ও ইতিবাচক থাকা জরুরি। আর খাওয়া-দাওয়ার কথা যদি বলি, চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে যাই। সুযোগ পেলেই ফল খাওয়ার চেষ্টা করি। বাসা থেকে বক্সে করে সবজি নিয়ে যাই। ফাস্টফুড একেবারেই খাই না। পানি খাই প্রচুর। মাঝেমধ্যে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, ইয়োগা করি, যাতে ক্যালরি বার্ন হয়।