কমলার খোসা ফেলে না দিয়ে যেভাবে কাজে লাগাবেন
কমলা খাওয়ার পরে খোসা ফেলে দেওয়া হয়, এটাই স্বাভাবিক। বলা যায়, নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর আর স্বাদের উৎস কমলার খোসা অনেকে না জেনেই ফেলে দেয়।
কমলা খোসার কী কী গুণ
পুষ্টিবিদরা বলছেন, কমলার খোসায় রয়েছে কপার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, এমনকি, ডায়েটারি ফাইবারও। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র এবং পুষ্টিবিদ ক্লেয়ার থর্নটন উড বলছেন, কমলার খোসায় ফলটির শাঁসের থেকে বেশি ফাইবার এবং ভিটামিন সি আছে। তার পাশাপাশি রয়েছে পলিফেনল, যা ডায়াবেটিসের মতো বহু ক্রনিক রোগ বা বার বার ফিরে আসে এমন রোগ নিরাময়ে কাজে লাগে। এ ছাড়া কমলার খোসায় রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডসও, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং প্রদাহ দূর করতে কাজে লাগে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৬ সালে ‘জার্নাল অফ নিউট্রিশনাল সায়েন্স’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রেও।
যেভাবে এই খোসা কাজে লাগাবেন
বিভিন্ন খাবারে কমলার খোসা ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার কমলার খোসা দিয়ে বানানো যেতে পারে সুগন্ধ যুক্ত পানীয়, এমনকি, মোরব্বাও।
খোসা কোরানো
কমলা লেবুর খোসা স্বাদ এবং গন্ধের ভান্ডার। তবে মনে রাখতে হবে, কোরানোর সময় খোসার সাদা অংশটি যেন মিশে না যায়। তা হলে স্বাদ তিতকুটে হয়ে যাবে। কেক, মাফিন, কুকিজ, সালাদ, স্মুদি, প্যানে শুকনো করে ভেজে নেওয়া সবজি অথবা মাছ বা মাংসের ম্যারিনেশনে কমলার খোসা কোরানো ব্যবহার করা যেতে পারে।
তেল বা ভিনিগারে
রান্নার তেল বা ভিনিগার কমলার গন্ধে জারিয়ে নেওয়া যেতে পারে কমলার খোসা ব্যবহার করে। তাতে যে খাবারেই ওই তেল বা ভিনিগার ব্যবহার করবেন, তাতে অন্য রকম স্বাদ এবং গন্ধ পাওয়া যাবে। সালাদের উপরে ছড়ানোর অলিভ অয়েলে কমলার গন্ধ থাকলে স্বাদ বদলে যাবে। সেক্ষেত্রে কমলার খোসার কয়েকটি কুচি একটি পাত্রে রেখে তাতে তেল পূর্ণ করে এমন জায়গায় রেখে দিন, যা সাধারণত অন্ধকার থাকে এবং যেখানের তাপমাত্রাও বেশি নয়। সাত-আট দিনেই অলিভ অয়েলে কমলার গন্ধ পাওয়া যাবে। ভিনিগারে কমলার খোসা ভিজিয়ে রেখেও সালাদে বা ম্যারিনেশনে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কমলার চা
কমলালেবুর খোসা ভালভাবে ধুয়ে নিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন অথবা চুলায় বা ওভেনে ঘণ্টা কয়েক রেখে শুকিয়ে নিন। এবার ফুটন্ত পানিতে কয়েক টুকরো খোসা ফেলে ৫ থেকে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ফোটাবেন না। স্বাদ এবং গন্ধ বাড়িয়ে নিতে চাইলে পানিতে দারুচিনির টুকরো ও লবঙ্গও দিতে পারেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শরীরের আরও নানা উপকারে লাগতে পারে ওই ‘চা’।
মোরব্বা
কিছুতে না মিশিয়ে শুধু কমলার খোসাই খাওয়া যেতে পারে মোরব্বা বানিয়ে। খোসাগুলো সরু করে কেটে নিন। এবার পানি ফুটিয়ে নেওয়ার পর তাতে খোসাগুলো ফেলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন, যাতে তেতো ভাব কেটে যায়। চুলায় একটি পাত্র বসিয়ে সমপরিমাণ চিনি এবং পানি দিয়ে চিনির সিরা বানিয়ে নিন। এরপরে পানি থেকে ছেঁকে নেওয়া কমলার খোসাগুলো সিরায় ফেলে জ্বাল দিন। চিনির রসে ভালভাবে মজলে, খোসার রঙে পানি পানি ভাব আসবে। চিনির সিরা শুকিয়ে এলে চুলা থেকে সরিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। শুকিয়ে এলে একটি শুকনো বায়ু নিরোধক পাত্রে তুলে রাখুন। উপরে চিনির গুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে পারেন।
সতর্কতা
পুষ্টিবিদরা বলছেন জৈব পদ্ধতিতে কমলালেবু চাষ না হলে খোসায় রাসায়নিক সারের উপাদান থেকে যেতে পারে। তাই খোসা ব্যবহার করার আগে সব সময় ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। অতিরিক্ত বা বেশি পরিমাণে কাঁচা কমলালেবুর খোসা খেলে, তা হজম করাও কঠিন। তাই কমলালেবুর খোসা বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভাল।