জিকা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লাখ
আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলোতে জিকা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ লাখ হতে পারে বলে ধারণা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ বিষয়ে আগামী সোমবার জিকা ভাইরাসকে হুমকি বিবেচনা করে বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করা হবে কি না এ বিষয়ে বৈঠক করবে সংস্থাটি।
সংস্থার মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চ্যান বিবিসিকে জানান, জিকা ভাইরাস হুমকি থেকে গুরুতর বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে। জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় একটি জরুরি টিম গঠন করা হয়েছে।
সংস্থাটির নির্বাহীদের বোর্ড মিটিংয়ে ড. চ্যান জানান, আশঙ্কা অনেক বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে অনশ্চিয়তাও। প্রশ্ন ওঠেছে, আমাদের দ্রুত উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। চ্যান জানান, এসব কারণে জরুরি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। সেই বছর ইবোলায় প্রায় ১১ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।
চ্যান জানান, বর্তমানে জিকা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বাজারে নেই। এ ছাড়া এই ভাইরাস ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষাও কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল ব্রাঞ্চ বর্তমানে এই ভাইরাসের টিকা নিয়ে কাজ করছে। এই ব্রাঞ্চের বিজ্ঞানীরা এরইমধ্যে উপদ্রুত এলাকায় সফর করে ভাইরাসে আক্রান্তদের রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তবে তাঁরা বলছেন, এই ভাইরাসের উপযুক্ত টিকার পরীক্ষা চালাতে তাদের দুই বছরের বেশি সময় লাগতে পারে। আর তা পারা গেলেও মানুষের কাছে প্রতিষেধকটি সহজলভ্য করতে এক দশকের বেশি সময় লেগে যেতে পারে।
এরই মধ্যে জিকা ভাইরাসের ব্যাপারে ব্রাজিলসহ বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে নেওয়া হয়েছে চরম সতর্কতামূলতা ব্যবস্থা। কারণ ২০টিরও বেশি দেশে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার হাজার হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রাজিলের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, এই ভাইরাসের কারণে দেশটির সরকার নারীদের আগামী দুই বছর গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছে।
এডিস মশা থেকে সাধারণত জিকা ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে থাকে। এই ভাইরাস মানুষের শরীরে একবার প্রবেশ করলে প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর, হাতে পায়ের সংযোগস্থলে ব্যথাসহ নানা ছোটখাটো কিছু শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। কিন্তু তা কম সময়ের মধ্যে সেরেও যায়। তবে বিপত্তি তৈরি হয় গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে। গর্ভাবস্থায় জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাইক্রোফেলাসি তথা বিকৃত ও ছোট মাথা নিয়ে জন্ম নিতে পারে শিশু। এসব শিশুর বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি থাকে, শারীরিক বৃদ্ধি কম হয় এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।