উপজেলা নির্বাচন আরেকটা ভোটচুরির ভাঁওতাবাজি : আমীর খসরু
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2024/04/17/aamiir_khsru.jpg)
উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ‘ভোটচুরির ভাঁওতাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আজ বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু এই মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, ওরা উপজেলা নির্বাচন দিয়েছে। যেদেশে ভোট নাই সেই দেশে ভোটে অংশগ্রহন করার কোনো সুযোগ নাই।যেখানে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নাই, যেখানে কোনো পার্টিসিপেশন নাই, যেখানে আবার কিসের ভোট? সুতরাং এই যে উপজেলা নির্বাচন এটা দেশের মানুষকে আরেকটা ধাপ্পাবাজির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা ভোটের নামে ভাঁওতাবাজি। ভোট বলে কিছু নাই এই এদেশে। একটা ভোটচুরি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আজকে তারা (সরকার) জিম্মি করে রেখেছে।
সরকারের এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর ‘ঐক্য অটুট’থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করে আমীর খসরু বলেন, আমাদের সুখবর হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজ তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি আমাদের ঐক্য অটুট আছে, বিএনপির ঐক্য অটুট আছে। এই ঐক্য ভাঙার চেষ্টা কোনো কিছু বাকি নাই। টাকা-পয়সা থেকে ভয়ভীতি থেকে, জেল-জুলুম থেকে, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে সব চেষ্টা করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা ধান ক্ষেতে ঘুমিয়েছে, বেড়ি বাঁধে ঘুমিয়েছে কিন্তু বিরোধী দলের নেতারা কেউ কমপ্রোমাইজ করেনি। আমরা ৩১ দফা ঐক্যবদ্ধভাবে দিয়েছি… এটা চলমান আন্দোলনের দফা অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সাম্য-মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এক হয়েছি। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমাদের এই আন্দোলন চলমান আছে।
৭ জানুয়ারি ভোটে ৯৫ শতাংশ ভোটার না যাওয়া থেকে চলমান আন্দোলনের বিরোধী দলের ‘রাজনৈতিক সফলতা’উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ৯৫ শতাংশ মানুষ ওই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এবার সেই চিন্তা থেকে সরকার ভোটারদের আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে। এবার তারা চিন্তা করেছে যে, মানুষ নৌকাকে ভয় পায়… নৌকার কথা শুনলে বোধহয় ভোট কেন্দ্রে যাবে না। সেজন্য নির্বাচনে তারা এবার দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারাই স্থানীয় সরকার আইন করেছে নৌকা দিয়ে অর্থাৎ দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার জন্য। আইনটা কিন্তু বাতিল করেনি… আইন রেখে তারা এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছে না। কারণ ওরা দেখছে, বাংলাদেশের জনগণ নৌকা যেখানে আছে তারা সেখানে নাই… তারা নৌকা বয়কট করেছে। তাই এই উপজেলা নির্বাচন আরেকটি ভাঁওতাবাজির নির্বাচন। ভোটচুরি প্রকল্পই তাদের ক্ষমতার উৎস, এই ভোটচুরির প্রকল্প তাদের ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে।
আমীর খসরু বলেন, যারা ব্যাংক লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে তাদের জন্যে এই ব্যাংক একত্রীকরণ আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। তাদেরকে রক্ষা করার জন্য…. যারা লুটপাট করে বাংলাদেশের সম্পদ নিয়ে গেছে, যারা ব্যাংকের আমানতের টাকা লুটপাট করেছে তাদেরকে আরও সুবিধা দেওয়ার জন্য জোর করে এই একত্রীভুত করার প্রক্রিয়া সরকার নিয়েছে।
বিএনপি ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা করেছে। গতকাল দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনটি ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ করে। এর ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে প্র্রবাসী সরকার শপথ গ্রহণ করে। আলোচনা সভায় প্রজাতন্ত্র দিবসের দাবি উপস্থাপন করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে বলেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা, যারা জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের এদেশে বসবাস করা সম্ভব নয়। এই খুনিদের এই জুলুমবাজ, দখলদার সরকারকে বিতাড়িত না করতে পারলে এদেশে সাধারণ মানুষদের বসবাস কঠিন হয়ে পড়বে।
আ স ম রব বলেন, এই দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম… এমন দৃশ্য এমন পরিবেশ দেখার জন্য নয়। গণতন্ত্র থাকবে না সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। আপনারা জেগে উঠুন…দেশকে বাঁচান, মানুষকে বাঁচান। এই গণতন্ত্র ফেরানোর লড়াইকে এগিয়ে নিন, এদেরকে পরাজিত করুন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মাত্র কত বছর বয়স ছিল রব ভাই বলতে পারবেন স্বাধীনতার পতাকা (একাত্তরের ২ মার্চ) দেখানো হয়েছে মানুষকে। এই পতাকা রক্ষা করবার জন্য লড়াই করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে। মানুষ যুদ্ধ করেছে এবং আমরা জিতেছি… কল্পনার মধ্যে ছিল কারো…. এরকম হতে পারে ভাবতে পেরেছেন আগে। কিন্তু তা হয়েছে।
মান্না বলেন, আজও মানুষের মধ্য বিক্ষোভের যে আগুন জ্বলছে, সেই আগুনকে ঠিকমতো গুছিয়ে সেটাকে একটা দাবানল তৈরি না করলে বিক্ষোভে আন্দোলনে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি, এটার জন্য কোনো হটকারী কর্মসূচির কথা আমি তো বলবই না…কারণ হঠকারী কোনোদিন গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হয় না, সফলতার দিকে নিয়ে যায় না। কিন্তু গঠনমূলকভাবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যত দেরি হবে তত আমাদের জন্য ক্ষতি হবে।
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।