খুব কম সময়ের নোটিশে শেখ হাসিনা ভারতে এসেছেন : জয়শঙ্কর
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, খুব কম সময়ের নোটিশে শেখ হাসিনা ভারতে এসেছেন।
সর্বদলীয় বৈঠকের পর বাংলাদেশ নিয়ে সংসদে দেওয়া বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যসভা ও লোকসভার বিবৃতিতে জয়শঙ্কর আরও বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী হাসিনা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। খুব কম সময়ের নোটিশে তিনি সেই মুহূর্তে ভারতে আসার অনুমোদন দেওয়ার অনুরোধ করেন। তার বিমান ভারতে আসার অনুমোদন চাওয়া হয়। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি দিল্লিতে এসে পৌঁছান।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। ২০২৪-এর জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর সেখানে প্রবল উত্তেজনা, গভীর বিভাজন ও মেরুকরণ হয়। জুনে ছাত্র আন্দোলনের পর পরিস্থিতি আরও গম্ভীর হয়ে ওঠে। সহিংসতা বাড়ে। ভবন ও পরিকাঠামোর ওপর আক্রমণ হয়। রেল ও ট্রাফিক বিঘ্নিত হয়। জুলাইতেও বিক্ষোভ চলে। আমরা এই সময় বারবার সবাইকে সংযত হতে বলি এবং জানাই যে, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে।’
জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, ‘আমরা যে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে ছিলাম, সবাইকে একই কথা বলি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও মানুষের ক্ষোভ কমেনি। বিক্ষোভ চলতে থাকে। এই সময় একটা দাবিতেই আন্দোলন হয়, হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। ৪ আগস্ট পুলিশ আক্রান্ত হয়। সহিংসতা বাড়ে। সংখ্যালঘুদের ব্যবসা ও মন্দির-সহ অনেক জায়গায় আক্রমণ করা হয়।’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতির এখনও পরিবর্তন হচ্ছে। সেনাপ্রধান ভাষণ দিয়ে বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নিচ্ছেন। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সেখানে থাকা ভারতীয়দের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। মোট ১৯ হাজার ভারতীয় আছেন। তার মধ্যে নয় হাজার পড়ুয়া। প্রচুর ভারতীয় ছাত্রছাত্রী গতমাসে দেশে ফিরে এসেছেন।’
জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটে উপদূতাবাস আছে। আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করা শুরু করবে।’
জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘সংখ্যালঘুরা কেমন আছেন, তার দিকেও নজর রেখেছি। বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সংগঠন তাদের নিরাপত্তার জন্য সচেষ্ট। আমরা তা স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমরা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। সীমান্তরক্ষীদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা গত ২৪ ঘণ্টা ধরে যোগাযোগ রেখেছি। আমরা সংসদের সমর্থন চাইছি। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্তিক বিষয়ে সবসময়ই মতৈক্য হয়েছে।’
দেশটির সর্বদলীয় বৈঠকে জয়শঙ্কর বলেছেন জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনাকে তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করার জন্য ভারত কয়েকদিন সময় দিতে চায়।’
এসময় বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী তিনটি প্রশ্ন করেন, তিনি জানতে চান, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত সরকারের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা কী? জবাবে জয়শঙ্কর জানান, বাংলাদেশের পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। সরকার তার দিকে নজর রাখছে। রাহুলের দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশে বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে। জয়শঙ্কর বলেন, ‘কেন্দ্র তা তদন্ত করে দেখছে।’ রাহুল জানতে চান, বাংলাদেশে যে এই ধরনের পরিবর্তন হতে পারে, সরকার কি তা আঁচ করেছিল? জয়শঙ্কর জবাব দেন, ‘সরকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে।’
বৈঠকে তৃণমূলের লোকসভা ও রাজ্যসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও ব্রায়েন যোগ দেন। তৃণমূলের নেতারা বলেছেন, ইতোমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। তাদের অনুরোধ, কেন্দ্র বাংলাদেশ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা যেন মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে বড় সীমান্ত পশ্চিমবঙ্গেরই আছে। সেখানে কিছু হলে তার অভিঘাত রাজ্যের ওপর এসে পড়ে। এই সময় সামাজিক মাধ্যমে সবাই যেন সংযত থাকেন।